Powered by Froala Editor
পরিবেশ বাঁচাতে একজোট রাষ্ট্রপ্রধানরা, কী এই কপ সম্মেলন?
১/১০
গতকাল থেকে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে শুরু হয়েছে কপ-২৬ সম্মেলন। সারা পৃথিবী থেকে ২০০টি দেশের অন্তত আড়াই হাজার প্রতিনিধিকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৩ দিনব্যাপী এই সম্মেলন। আন্তর্জাতিক পরিবেশ সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে বিরাট এই আয়োজনের দিকে তাকিয়ে আছে সারা পৃথিবী। আদৌ কি এর মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাবে? সেইসঙ্গে উঠে আসছে কয়েকটি সাধারণ প্রশ্ন। কী এই কপ সম্মেলন? এর তাৎপর্যই বা কী?
২/১০
১৯৯২ সালের রিও আর্থ সামিট থেকে জন্ম নিয়েছিল জাতিপুঞ্জের নতুন একটি সংগঠন। কনভেনশন অন বায়োডাইভার্সিটির সহযোগী হিসাবে তৈরি হয় ইউনাইটেড নেশনস’ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি)। ১৯৯৪ সাল থেকে প্রতি বছর এই জাতিপুঞ্জের সমস্ত সদস্য ও তাঁদের প্রতিনিধিদের নিয়ে শুরু হয় সম্মেলন। আর তারই নাম কনফারেন্স অফ দ্য পার্টিজ বা সংক্ষেপে কপ।
৩/১০
ইউএনএফসিসিসি ছাড়াও জাতিপুঞ্জের অন্যান্য সংগঠনগুলি পরিচালনা সংক্রান্ত আলোচনাও হয় এই কপ সম্মেলনে। এর মধ্যে দূষণ প্রতিরোধ, বাস্তুতন্ত্র সুরক্ষা, তামাক বিরোধী সচেতনতার মতো বিষয়গুলিও স্থান পেয়েছে। সেইসঙ্গে দুর্নীতি দমন, শান্তি প্রতিষ্ঠা, পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহারের মতো বিষয়ও উঠে এসেছে আলোচনায়।
৪/১০
২০১২ সালে ভারতেও একটি কপ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। সেবারে আলোচনার বিষয় ছিল জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ। হায়াদ্রাবাদ শহরে অনুষ্ঠিত সেই সম্মেলনে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের বিষয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
৫/১০
এর মধ্যে ইউএনএফসিসিসি-র কাজের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় ১৯৯৭ সালে সাক্ষরিত কায়োটো প্রোটোকলের পর থেকেই। সেই প্রথম বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়। অবশ্য প্রাথমিকভাবে মাত্র ৫টি উন্নত দেশেই পরিক্ষামূলকভাবে চালু করা হয় কায়োটো প্রোটোকলের নিয়মকানুন।
৬/১০
২০০৭-০৮ সালের সমীক্ষায় দেখা যায় কায়োটো প্রোটোকলের লক্ষ্যমাত্রা আংশিকভাবে সফল। এর ফলে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণও অনেকটা কমেছে। কিন্তু সেই সাময়িক স্বস্তির ভাব কাটতে না কাটতেই ২০১৩ সালে আবার দেখা গেল বিপরীত ছবি। আবারও বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বাড়তে শুরু করে।
৭/১০
এই পরিস্থিতিতেই ২০১৫ সালে আয়োজিত হয় প্যারিস সম্মেলন। প্যারিস চুক্তি অনুসারে কপের সদস্য প্রতিটি দেশই কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে। ২০৩০ সালের মধ্যে সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করারও প্রতিশ্রুতি দেয় প্রত্যেকেই। সেই প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, বর্তমানে কার্বন নিঃসরণের পরিসংখ্যান ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, তাই পর্যালোচনা করার কথা কপ-২৬ সম্মেলনে।
৮/১০
২০২০ সালেই কপ-২৬ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোভিড অতিমারীর কারণে তা সম্ভব হয়নি। এদিকে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও। দাবানল এবং বন্যা, এই দুই বিষয়েই ৫০ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে ২০২০ সাল। ২০২১ সালে পরিসংখ্যান আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। আর তাই এবারের কপ সম্মেলন এতটা তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠছে।
৯/১০
এবারের সম্মেলনে আরেকটি বড়ো বিষয় বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির মতামত। কার্বন নিঃসরণ কমাতে গিয়ে ব্যবসায়িক লোকসানের মুখে পড়ছে অনেক সংস্থা, এমন অভিযোগ উঠেছিল আগেই। প্যারিস সম্মেলনে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। গ্লাসগো সম্মেলনে এই লোকসানের বিষয়টিকে মাথায় রেখে একটি সাম্যাবস্থা আনার চেষ্টা করা হবে বলে মনে করছেন অনেকেই।
১০/১০
পাশাপাশি এবারের সম্মেলনে উপস্থিত থাকছেন নানা ধর্মীয় সংগঠনের নেতারাও। ক্যাথলিক চার্চ এবং ইসলামিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা তো থাকছেনই। অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায় থেকেও প্রতিনিধিরা থাকছেন। ফলে সার্বিকভাবে এক ধরনের সচেতনতা প্রসারের চেষ্টাও হবে বলে মনে করছেন অনেকে। এখন জলবায়ু পরিবর্তনের এই ধাক্কা আদৌ কতটা সামলানো যাবে, তার উত্তর পেতে অবশ্য আরও এক দশক লেগে যাবে।