দোকানজুড়ে কবিদের ছবি, নিজের মর্জিতেই বাঁচেন কবিতাপ্রেমী চা-বিক্রেতা

আর পাঁচটা সাধারণ চায়ের দোকানে ঢুকলে যে দৃশ্য দেখা যায় চোখের সামনে, তার থেকে অনেকটাই আলাদা এই দোকান। মনে হবে, অজানা কোনো জায়গায় চলে এসেছেন বুঝি। স্কুল বা লাইব্রেরির দেওয়াল এক ঝলকে মনে পড়ে যেতে পারে আপনার। কিন্তু না, নিখাদ চায়েরই দোকান এটি।

দয়ারাম দয়ালের চা দোকানে ঢুকলে চমকই লাগে। বাংলাদেশের লালমনিরহাট শহরের কালিবাড়ি এলাকায় অবস্থিত এই দোকানের বেড়ার দেওয়ালে সার দিয়ে কবি, সাহিত্যিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি। সঙ্গে বাজছে পুরোনো দিনের গান। শহুরে ক্যাকোফোনিতে মন-মস্তিষ্ক যখন ঝালাপালা হওয়ার জোগাড়, তখন দয়ারামের দোকান কিছুটা হলেও প্রশান্তি দেয়।

৩২ বছর বয়সি দয়ারামের বাড়ি আদীতমারী উপজেলার পূর্ব ভেলাবাড়ি গ্রামে। বাবা-মা ও পাঁচ ভাইবোনের সংসারে দয়ারাম চতুর্থ। আর্থিক স্বচ্ছলতার অভাবে পড়াশোনা বেশিদূর চালাতে পারেননি। তৃতীয় শ্রেণীতে পড়াকালীন পড়াশোনায় ইতি টানতে হয় তাঁকে।

শহরে এসে কিছুদিন সোনার দোকানে মজুরির কাজ করেন দয়ারাম। পরে ৩০ টাকা রোজে কাজ করতেন হোটেলে। তখন থেকেই ইচ্ছা ছিল নিজের একটা দোকান করবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। একটি দোকান ভাড়া নিয়ে ২০১৩ সালে চা, বিস্কুট ও পাউরুটির ব্যবসা শুরু করেন তিনি। তখন থেকেই কবি, সাহিত্যিকদের ছবি সংগ্রহ শুরু। কেউ কেউ উৎসাহ দিয়ে পাশে থেকেছেন, তাচ্ছিল্যও করেছেন অনেকেই। অবশ্য তাতে বিশেষ আমল দেননি দয়ারাম।

স্কুলে পড়ার সময় থেকেই মনীষী, মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনের প্রতি আগ্রহ জন্মায় তাঁর। কবিদের জীবন, কবিতা ও গল্পও টানত তাকে। সেই আগ্রহ আর ভালোবাসা থেকেই প্রথমে দোকানে লাগান কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র ও কাজী নজরুল ইসলামের ছবি। পরে সেখানে যুক্ত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শামসুর রহমান, মাদার টেরেসা, সুফিয়া কামাল, সুকান্ত ভট্টাচার্য, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, আব্বাসউদ্দিন, লালন শাহ, জীবনানন্দ দাশ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রমুখ। আছে বাংলাদেশের মানচিত্রও।

প্রতিদিন দোকানে ব্যবসা হয় ৮০০-১০০০ টাকার। ভবিষ্যতে দোকান আরও বড় হোক, চান দয়ারাম। সেখানেও নতুন করে কবিদের ছবি লাগাবেন তিনি। কেননা তাঁরাই দয়ারামের প্রেরণা, নতুন কাজের উৎসাহ।