সম্পূর্ণ একার উদ্যোগে মাইসোর শহরে আস্ত একটি লাইব্রেরি গড়ে তুলেছিলেন সৈয়দ আইজ্যাক। স্থানীয় স্কুলপড়ুয়া থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত মানুষের ভিড় লেগে থাকত সেই লাইব্রেরিতে। কিন্তু এক রাত্রের দুর্ঘটনায় সবকিছু পুড়ে যায়। গতবছর ৯ এপ্রিল সকালে চেনা ঠিকানায় গিয়ে সৈয়দ দেখতে পান লাইব্রেরির বদলে পড়ে আছে একটা ছাইয়ের স্তূপ। কিন্তু সব হারিয়েও মানুষ উঠে দাঁড়ানোর সাহস হারিয়ে ফেলে না, সেটাই আবার প্রমাণ করে দিলেন সৈয়দ (Syed Issaq)। সেই ধ্বংসস্তূপের উপরেই আবার গড়ে তুলেছেন লাইব্রেরি (Library)। ১১ হাজার বইও সংগ্রহ করেছেন। ২৬ জানুয়ারি, প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন নতুন করে উদ্বোধন হল তার। আবারও সেখানে ভিড় জমাল কচিকাঁচারা। প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানও শুরু হল সেই লাইব্রেরি থেকেই।
নিজে কোনোদিন পড়াশোনার সুযোগ পাননি সৈয়দ। কন্নড় ভাষাটাও ভালো করে পড়তে জানেন না। অন্য ভাষা তো দূরের কথা। কিন্তু নতুন প্রজন্মের কারোর যেন লেখাপড়ায় সমস্যা না হয়, তাই তাদের জন্য ২০১১ সালে তৈরি করেছিলেন এই লাইব্রেরি। কন্নড় ভাষার পাশাপাশি উর্দু, ইংরেজি, তামিল, তেলেগু নানা ভাষার বই এনে জড়ো করেছিলেন সেখানে। ৪০০ বর্গফুটের ঘরটাকে ভরিয়ে তুলেছিল ১১ হাজার বই। তারপর গতবছর ৯ এপ্রিল ঘটে গেল দুর্ঘটনা। তদন্তে জানা যায়, কোনো পথচারীর ছুঁড়ে ফেলা সিগারেটের টুকরো থেকেই আগুন লাগে। তারপর রাতের বেলায় আগুন নেভানোরও কেউ ছিলেন না। ফলে দ্রুত সমস্তকিছু ভষ্মীভূত হয়ে যায়।
এই দুর্ঘটনার কথা জানতে পেরে সৈয়দের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন ফাতাহিন মিসবাহ নামের এক ব্যক্তি। তিনি অনলাইনে সমস্ত দেশের মানুষের কাছে আর্থিক সাহায্য চান। সামাজিক মাধ্যমের দৌলতে ছড়িয়ে পড়ে সেই আবেদন। মাত্র ৪ দিনের মধ্যে ২৯ লক্ষ টাকা জমা পড়ে সেখানে। কিন্তু এই সময়েই কর্ণাটক সরকারের টনক নড়ে। সরকারের মনে হয়, এই দায়িত্ব সরকারেরই নেওয়া উচিৎ। আর তাই সমস্ত মানুষের টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সরকারি প্রতিশ্রুতির পরেও মাসের পর মাস কোনো কাজ এগোয় না। এমনকি সরকারি অফিসে ঘুরে ঘুরেও কোনো উত্তর পাননি সৈয়দ। শেষে নিজেই নিজের পথ খুঁজে নেন।
এবার স্থানীয় মানুষদের কাছেই আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানান সৈয়দ। তাঁদের সামর্থ্য কম। কিন্তু সকলের মিলিত চেষ্টায় অর্থ সংগ্রহ হয়ে যায়। ডিসেম্বর থেকে লাইব্রেরি তৈরি এবং বই কেনার কাজও শুরু হয়ে যায়। আর ২৬ জানুয়ারি নতুন করে উদ্বোধন হল লাইব্রেরির। যতদিন বেঁচে আছেন, কোনোভাবেই মাইসোরের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ হতে দেবেন না, পণ করেছেন সৈয়দ আইজ্যাক।
আরও পড়ুন
কখনও উটের পিঠে, কখনও যুদ্ধযানে— পৃথিবীর আশ্চর্য কিছু ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির গল্প
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
৪১ বছর ধরে বাড়ি বাড়ি বই পৌঁছে দিয়েছেন কেরালার ‘জীবন্ত লাইব্রেরি’