বাজার ছেয়েছে সস্তা ইরানি আপেলে, সিঁদুরে মেঘ দেখছেন কাশ্মীরের কৃষকরা

পর্যটন শিল্পের কথা বাদ দিলে, কাশ্মিরের আয়ের আরও একটি বড়ো অংশ আসে কৃষিকাজ থেকে। মূলত আপেল এবং জাফরান চাষই নিয়ন্ত্রণ করে কাশ্মিরের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। জলবায়ু পরিবর্তন এবং মহামারীর কারণে এর আগেই ব্যাপক অঙ্কের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল কাশ্মিরি জাফরান চাষিরা। এবার সিঁদুরে মেঘ দেখছেন আপেল ব্যবসায়ীরাও (Apple)। ইরান (Iran) থেকে আমদানিকৃত অবৈধ আপেলই যেন সাক্ষাৎ শমন হয়ে দাঁড়িয়েছে কাশ্মিরের আপেল (Kashmiri Apple) কৃষকদের কাছে।

হ্যাঁ, বিগত কয়েক বছর ধরেই অবৈধভাবে ভারতের বাজার ছেয়েছে সস্তা ইরানি আপেল। বাক্স পিছু কাশ্মিরি আপেলের দাম থাকে ১২০০ টাকার কাছাকাছি। সেখানে মাত্র ৭০০ টাকা দরেই বাজারে মিলছে এক বাক্স ইরানি আপেল। বাইরে থেকে দেখে কাশ্মিরের ও ইরানের আপেলকে আলাদা করারও উপায় নেইই কোনো। প্রশ্ন থেকে যায়, প্রায় অর্ধেক মূল্যে কীভাবে পাওয়া যাচ্ছে ইরান থেকে আমদানিকৃত আপেল? আর তাকে অবৈধই বা বলা হচ্ছে কেন?

বৈধভাবে ইরান থেকে আপেল আমদানির করতে মোটা অঙ্কের শুল্ক চাপে আপেলের মূল দামের ওপর। সেই শুল্কের বোঝা এড়াতেই ঘুরপথে আফগানিস্তান দিয়ে ভারতে আমদানি করা হচ্ছে ইরানি আপেল। আফগানিস্তান সাউথ এশিয়ান ফ্রি ট্রেড এরিয়ার অংশ হওয়ায়, এই পথে আপেল আমদানি করতে বাড়তি কোনো মূল্যই দিতে হয় না ব্যবসায়ীদের। আর বেআইনিভাবে সেই পথটাই অবলম্বন করছেন ইরানের ব্যবসায়ীরা। খাতায়-কলমে আফগানিস্তানে উৎপাদিত আপেল হিসাবে ভারতের বাজার ছেয়ে ফেলছে এই আপেল। 

বাজারে টিকে থাকতে কাশ্মিরি কৃষকদের কাছে এখন একমাত্র উপায় সেখানে উৎপাদিত আপেলের মূল্য কমিয়ে আনা। পারতপক্ষে যা অসম্ভব। কীটনাশক থেকে শুরু করে সার, পরিচর্যা এবং সর্বপরি শুল্ক— সবমিলিয়ে বাক্স পিছু লাভের অঙ্কটা নেমে আসে মাত্র ২০০ টাকায়। পাশাপাশি গুণগত মানের নিরিখেও ইরানি আপেলের তুলনায় এগিয়ে কাশ্মিরের স্বাদই। ফলে, বলতে গেলে বেআইনি এই আপেলের দামের সঙ্গে জুত করে ওঠা কাশ্মিরি কৃষকদের পক্ষে এক কথায় অসম্ভব।

আরও পড়ুন
উইন্টার অলিম্পিকে প্রথমবার স্কিয়িং-এ ভারত, স্বপ্ন দেখাচ্ছেন কাশ্মীরের আরিফ

বছরে প্রায় ১২০০ কোটি টাকার আপেল উৎপাদিত হয় কাশ্মিরে। সাম্প্রতিক সময়ে চাহিদা কমে যাওয়ায়, কাশ্মিরের হিমঘরে বন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে প্রায় দেড় কোটি বাক্সেরও বেশি আপেল। আবার ক্রেতার অভাবে বহু আপেল নষ্টও হচ্ছে বাজারে। সব মিলিয়ে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে কাশ্মিরের আপেল চাষিরা। সেই সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী কাশ্মিরের প্রায় ২৩ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত এই ব্যবসার সঙ্গে। 

আরও পড়ুন
কাশ্মীরের ডাল লেকে ভাসমান থিয়েটার, এশিয়ার প্রথম

কিছুদিন আগেই কাশ্মিরের আপেল চাষিরা বিষয়টি নিয়ে লিখিতভাবে তদন্তের আর্জি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি সরকারের তরফ থেকে। মেলেনি প্রত্যুত্তরও। যদি এভাবেই চলতে থাকে পরিস্থিতি, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই বাজার থেকে সম্পূর্ণভাবে মুছে যাবে কাশ্মিরি আপেলের অস্তিত্ব…

আরও পড়ুন
বিলুপ্তির পথে কাশ্মীরের ঐতিহ্যবাহী পাপিয়ার-মাশে শিল্প

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
কাশ্মীরে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ৩ লক্ষ বৃক্ষচ্ছেদন, ঘর হারাবেন ৩৭০০ পরিবার