বেআইনি বৃক্ষচ্ছেদন করবেট জাতীয় উদ্যানে, জড়িত বনকর্মীরাই

উত্তরাখণ্ড তো বটেই, গোটা উত্তর-ভারতের মধ্যে অন্যতম বায়ো-হটস্পট করবেট ন্যাশনাল পার্ক। তার নামের সঙ্গে যেমন জড়িয়ে রয়েছে এক দীর্ঘ ইতিহাস, তেমনই এই জাতীয় উদ্যানই সমগ্র এশিয়ার প্রাচীনতম সংরক্ষিত বনভূমি। কিন্তু আদৌ কি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে করবেট জাতীয় উদ্যানের? প্রশ্ন উঠেছিল বছর কয়েক আগে। সাম্প্রতিক সময়ে বেআইনিভাবে প্রায় ১০ হাজার গাছ (Deforestation) কাটা হয়েছে এই অরণ্যে। সেইসঙ্গে চলছে চোরাচালানও। গত বছর সুপ্রিম কোর্টে এমন অভিযোগ তুলে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন আইনজীবী এবং পরিবেশকর্মী গৌরব বনসাল। সেই মামলার নিরিখেই এবার বিচার পেল করবেট জাতীয় উদ্যান (Corbett National Park)। 

কিন্তু কারা জড়িত ছিল এই অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে? খোদ বনদপ্তরের আধিকারিক এবং কর্মীরা। শুনলে চমকে ওঠারই কথা। জঙ্গলের রক্ষাকর্তারাই হয়ে উঠেছিলেন অরণ্যের ‘ভক্ষক’। গত মাসে কালাগড় বনবিভাগের রেঞ্জ অফিসার ব্রিজ বিহারী শর্মাকে অবৈধ বৃক্ষচ্ছেদনের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছিল। এবার তদন্তের ফল প্রকাশের পর আরও দীর্ঘায়িত হল সেই তালিকা। সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডে জড়িত বনদপ্তরের কর্মকর্তাদের ছাঁটাই করার ও তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিলেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। 

বছর কয়েক আগে উত্তরাখণ্ড সরকার জানিয়েছিল, ব্যাঘ্র সাফারিতে পর্যটকদের জন্য বিশেষ পরিকাঠামো গড়ে তুলতে ১৬৩টি গাছ কাটা হবে করবেট পার্কে। সেই মতো গাছ কাটার আদেশও পেয়েছিলেন বনকর্মীরা। তবে সংখ্যাটা ১৬৩-তে থামেনি। বরং সরকারের অনুমতি ছাড়াই ক্রমাগত বৃক্ষচ্ছেদন প্রক্রিয়া চলেছে অনৈতিকভাবে।

সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হওয়ার পর, একে একে খুলতে থাকে এই চোরাকারবারের জাল। চলতি মাসের শুরুতে এই তদন্তের ভার দেওয়া হয় রমন ম্যাগসেসে পুরস্কারপ্রাপ্ত আইএফএস অফিসার সঞ্জীব চতুর্বেদীকে। তাঁর হাত ধরেই শেষ পর্যন্ত যবনিকা পতন হল এই অনৈতিক চক্রের। পাখরো, মোরঘাটি এবং কালাগড় বন বিভাগে গাছ কাটার জন্য অস্থায়ী নির্মাণও তৈরি করা হয়েছিল। সরকারের নোটিস ছাড়াই নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয়েছিল বাফার জোনেও। এমনটাই উঠে আসছে তদন্তে। শেষ পর্যন্ত প্রশাসন এবং পরিবেশকর্মীদের তৎপরতায় ইতি পড়ল সেই ব্যবসায়। কিন্তু যে পরিবেশগত ক্ষতি হয়েছে বিগত বছরগুলিতে, সেই ক্ষতদাগ সারিয়ে তুলতে কত সময় লাগবে করবেট ন্যাশনাল পার্কের? তার প্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থাই বা নেবে প্রশাসন? জানা নেই উত্তর…

আরও পড়ুন
২০৩০-এর মধ্যেই অরণ্যনিধন শূন্যে, 'অসম্মত' ভারত!

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
কার্বন নির্গমন করছে বিশ্বের ১০টি সংরক্ষিত অরণ্য, জানাল ইউনেস্কো