পৃথিবীর তিন-চতুর্থাংশ জল। অথচ প্রতিদিন একটু একটু করে কমে যাচ্ছে পানীয় জলের পরিমাণ। পরিবেশ দূষণের প্রক্রিয়ায় সেই গতি আরও বেড়েছে। আর তার কারণ, পৃথিবীর জলের ভাণ্ডারের খুব সামান্য অংশই আমরা পানীয় হিসাবে ব্যবহার করতে পারি। বেশিরভাগটাই রয়েছে সমুদ্রে। সমুদ্রের জলকে পানযোগ্য করে তোলা যায়। তবে তার প্রক্রিয়া বেশ জটিল এবং ব্যয়বহুল। বিজ্ঞানীদের চেষ্টায় এবার সমুদ্রের জলকে (Seawater) পানীয় জলে পরিণত করার এক সহজ পথও খুঁজে পাওয়া গেল। মাদ্রাজ আইআইটির (IIT Madras) গবেষকদের সঙ্গে এই গবেষণায় কাজ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি এবং নেদারল্যান্ডসের ডেলফট ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির গবেষকরাও। সম্প্রতি ‘ডিস্যালাইনেশন’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সেই গবেষণাপত্র।
সমুদ্রের জলের লবণাক্ততা দূর করার প্রক্রিয়া নিয়ে বিজ্ঞানীদের ভাবনাচিন্তা নতুন নয়। শুধুমাত্র এই বিষয়ে গবেষণার জন্যই এলসেভিয়ার থেকে প্রকাশিত হয় ‘ডিস্যালাইনেশন’ পত্রিকা। তবে এই সমস্ত গবেষণার পরেও কোনো ব্যবহারোপযোগী পথ খুঁজে পাওয়া যায়নি এতদিন। এবার আশার আলো দেখছেন বিজ্ঞানীরা। আর এক্ষেত্রে পথ দেখিয়েছে প্রকৃতিই। আইআইটি মাদ্রাজের অধ্যাপক সরিথ পি সাথিয়ান জানিয়েছেন, সমুদ্রের জল শিলাস্তরের যে ছিদ্র দিয়ে ভূগর্ভে প্রবেশ করে, তা পরীক্ষা করতে গিয়েই এই পদ্ধতি মাথায় আসে তাঁদের। এই ছিদ্রগুলি খানিকটা বালিঘড়ির মতো আকৃতির হয়। এরপর বিজ্ঞানীরা কার্বন ন্যানোটিউব এবং গ্রাফিন ন্যানোটিউব ফাইবারকে বালিঘড়ির আকার দিলেন। আর তাতেই দেখা গেল, সাধারণ ডিস্যালাইনেশন ফিল্টারের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকরভাবে জল আর লবণকে আলাদা করতে পারছে এই ফিল্টার।
অধ্যাপক সাথিয়ানের সঙ্গে এই গবেষণায় মাদ্রাজ আইআইটি-র আরেক গবেষক বিষ্ণু প্রসাদ কুরুপথ, সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির গবেষক ডঃ শ্রীধর কুমার কন্নম এবং ডেলফ ইউনিভার্সিটির গবেষক ডঃ রেমকো হার্টক্যাম্প। যদিও এখনই বাণিজ্যিকভাবে সমুদ্রের জলকে পানের উপযোগী করে তোলার মতো যন্ত্র তাঁরা তৈরি করতে পারেননি, তবে তার জন্য উপযুক্ত প্রযুক্তির সন্ধান পেয়েছেন। এরপর সেই প্রযুক্তিকে ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে হবে। সব মিলিয়ে কতদূর ফলপ্রসূ হয় এই গবেষণা, তা জানতে অবশ্য কিছুদিন অপেক্ষা করতেই হবে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বৃষ্টির জল থেকেই সরাসরি বিদ্যুৎ তৈরি, পথ দেখাচ্ছে দিল্লি আইআইটি