খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের অন্যতম একটি অঙ্গই হল ফুড প্যাকেজিং। আর সেখানে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে প্লাস্টিক। তবে এই প্লাস্টিক অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুনর্নবীকরণ অযোগ্য। ফলে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে প্লাস্টিক আবর্জনার পরিমাণ। এবার এই সমস্যারই সমাধান দিলেন খড়গপুর আইআইটির দুই গবেষক। খোসার খোল থেকেই তৈরি করলেন বায়ো-ডিগ্রেডেবল ন্যানোক্রিস্টাল। যা খাদ্য প্যাকেজিংয়ের উপকরণ হিসাবে প্রতিস্থাপন করতে পারে প্লাস্টিককে।
খড়গপুর আইআইটির সহকারী অধ্যাপিকা জয়িতা মিত্র এবং রিসার্চ স্কলার এন. সাঁই প্রসন্ন যুক্ত ছিলেন গবেষণায়। গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল ফুড প্যাকেজিংয়ের জন্য তৈরি করা এমন কোনো বায়ো-ডিগ্রেডেবল ফিল্ম বা কোটিং যা ক্ষতি করবে না খাদ্যসামগ্রীর। যার মাধ্যমে খাদ্যকে বহুক্ষণ সংরক্ষণ করা যাবে প্লাস্টিকের মোড়কের মতোই। তবে সেক্ষেত্রে বেশ কয়েকটা শর্তপূরণ হলে তবেই তা ব্যবহার করা যাবে ফুড প্যাকেজিং-এ। যার মধ্যে রয়েছে যান্ত্রিক দৃঢ়তা, অক্সিজেন বা ময়েশ্চর বেরিয়ার এবং তাপীয় সহনশীলতার মতো চল।
এর সমাধান খুঁজতেই সেলুলোজের ব্যবহার করেন তাঁরা। যা বর্জ্য হিসাবে ফেলে দেওয়া শসার খোলার নির্যাসের প্রক্রিয়াকরণের মধ্যে থেকেই পৃথকীকরণ করেন এই দুই গবেষক। অধ্যাপিকা জয়িতা মিত্র জানান, “এর আগে অন্যান্য বিভিন্ন ফল ও সব্জির মধ্যে থেকেই এই ধরণের সেলুলোজ পৃথকীকরণের কাজ হয়েছে। কিন্তু শসা থেকে কখনো চেষ্টা করা হয়নি সেলুলোজ প্রক্রিয়াকরণের। আমরা পরীক্ষা করে দেখি, শসার নির্যাস থেকে যে সেলুলোজ পাওয়া যাচ্ছে তা অন্যদের থেকে অনেকটাই বেশি। প্রায় ১৮ শতাংশ। এই সেলুলোজ থেকে শুধুমাত্র স্ফটিক অংশগুলির ব্যবহারেই ন্যানো-ক্রিস্টাল তৈরি করেছি আমরা। খাদ্য-প্যাকেজিংয়ের সমস্ত শর্তই পূরণ করে এই ক্রিস্টালগুলি।”
মূলত বর্জ্য থেকেই তৈরি, তাই সেলুলোজের এই ফিল্ম তৈরিতে খরচও অনেক সামান্যই। বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক পরিমাণে এই ফিল্ম তৈরি করার সময় সেই খরচ আরও অনেকটাই কমবে বলে আশাবাদী আইআইটির এই গবেষক। তবে এই ফিল্মের ব্যবহার বিস্কুট বা চিপসের মতো খাদ্যের প্যাকেজিংয়ে ব্যবহৃত হতে পারবে না। কিন্তু আপেল-স্ট্রবেরি ইত্যাদি ফল ও পাউরুটি, বার্গার, প্যাটিস জাতীয় খাবারের পাতলা প্লাস্টিকের মোড়ককে প্রতিস্থাপন করতে পারে এটি। সেক্ষেত্রে অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারে দূষণের মাত্রা। পাশাপাশি এই ধরণের খাদ্যসামগ্রী সংরক্ষণে প্লাস্টিকের থেকেও দীর্ঘদিন নিরাপত্তা দেবে বায়ো-ডিগ্রেডেবল ন্যানো-ক্রিস্টালের এই ফিল্ম। সংরক্ষণ করা যাবে উচ্চ তাপমাত্রাতেও (২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত)। ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় সবুজ সংকেত পেয়েছে এই গবেষণার মডেল। এখন পরীক্ষা করে দেখা বাণিজ্যিকভাবে কত দ্রুত প্রতিস্থাপন করা যায় এই নতুন প্রযুক্তিকে। তাহলেই বিপ্লব আসতে পারে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের জগতে...
Powered by Froala Editor