গোটা দেশজুড়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে হাহাকার। চারিদিকেই মেডিক্যাল অক্সিজেনের চাহিদা। কোথাও আবার অক্সিজেন থাকলেও বন্দোবস্ত নেই সিলিন্ডারের। যাঁদের অবস্থা ততটাও আশঙ্কাজনক নয়, তাঁরাও কেবলমাত্র অক্সিজেনের অভাবেই ঢলে পড়ছেন মৃত্যুর কোলে। করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গ ঠেলে দিয়েছে এমনই এক অঘোষিত জরুরি অবস্থায়। আর এই পরিস্থিতিতেই সহজ সমাধান খুঁজে দিলেন ভোপালের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের গবেষকরা। তৈরি করলেন স্বল্পমূল্যের অক্সিজেন ঘনীভবন যন্ত্র।
ভোপালে তৈরি এই অভিনব অক্সিজেন ঘনীভবন যন্ত্রটির নাম ‘অক্সিকন’। প্রতি মিনিটে ৩ লিটার পর্যন্ত ৯৩-৯৫ শতাংশ খাঁটি অক্সিজেন সরবরাহ করতে সক্ষম এই যন্ত্র। যা বাজার চলতি অন্যান্য ঘনীভবন যন্ত্রের থেকে বেশ খানিকটা কার্যকরী। পাশাপাশি যেখানে এই যন্ত্রের দাম থাকে ৬০-৭০ হাজার টাকা, সেখানে ‘অক্সিকন’ তৈরিতে পড়বে মাত্র ২০ হাজার টাকায়। ফলত এই জরুরি অবস্থায় অনেকটাই সাশ্রয় হবে চিকিৎসাক্ষেত্রে।
তবে অক্সিজেন প্ল্যান্টে যেভাবে অক্সিজেন তৈরি করা হয়, তার থেকে এই যন্ত্রের কার্যপ্রণালী খানিকটা ভিন্ন। ডিভাইসটি তৈরি হয়েছে ওপেন-সোর্স প্রযুক্তিতে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, এই যন্ত্রটি আলাদা করে অক্সিজেন তৈরি করে না। বরং স্বাভাবিক বায়ুর থেকে অক্সিজেনকে বার করে আনে পরিশুদ্ধ করে। কীভাবে? অধ্যাপক মিত্রদীপ ভট্টাচার্য জানাচ্ছেন, এই যন্ত্রে ব্যবহার করা হয় জিওলাইট নামের একটি রাসায়নিক পদার্থ। স্বাভাবিক বায়ুকে উচ্চ চাপে এই জিওলাইট স্তম্ভের মধ্যে দিয়ে পাঠানো হয়। যা বায়ু থেকে নাইট্রোজেনকে সম্পূর্ণভাবে শোষণ করে নেয়। সরবরাহ করে অক্সিজেন। তাতে কার্বন ডাই-অক্সাইড অন্যান্য বায়বীয় উপাদান, থাকলেও তার পরিমাণ সামান্যই। পাশাপাশি যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত বৈদ্যুদিন ভালভের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায় অক্সিজেন নির্গমনের হারকেও।
তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, আয়তনে ছোট হওয়ায় এই যন্ত্রটি সম্পূর্ণ বহনযোগ্য। চাইলে খুব সহজেই বিভিন্ন অংশ খুলেও ফেলা যায় যন্ত্রটির। ফলত ‘অক্সিকন’ প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলেও ব্যবহারযোগ্য। একটি যন্ত্র থেকে নলের মাধ্যমে সরাসরি দুই বা ততোধিক ব্যক্তির দেহে অক্সিজেনে সরবরাহ করা যেতে পারে অনায়াসেই। নেই রিফিলিং-এর ঝঞ্ঝাটও। করোনা মহামারীর দ্বিতীয় তরঙ্গের এই কঠিন সময়ে, তা যে গুরুতর হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে চিকিৎসকদের তাতে সন্দেহ নেই কোনো।
আরও পড়ুন
করোনার একাধিক স্ট্রেন সক্রিয় ভারতে, হার মানছে অ্যান্টিবডিও
সদ্য আবিষ্কৃত এই যন্ত্রটির ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ইতিমধ্যেই আবেদন করা হয়েছে ভারত সরকারের কাছে। এখনও পর্যন্ত কোনো প্রত্যুত্তর মেলেনি মেডিক্যাল বোর্ডের থেকে। তবে অক্সিকনের ব্যবহারিক প্রয়োগ শুরু হলে, এই কঠিন পরিস্থিতিকে মুঠোর মধ্যে আনা যাবে বলেই আশাবাদী গবেষক মিত্রদীপ ভট্টাচার্য…
আরও পড়ুন
ইজরায়েলে একদিনে করোনায় মৃতের সংখ্যা শূন্য, ১০ মাসে প্রথম
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
করোনায় প্রয়াত মানবতাবাদী নেতা মৌলানা ওয়াহিউদ্দিন খান