বাংলা গানের জগতে সেই তিনের দশকে গায়ক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল যখন, তাঁর ঘোড়া ছিল একটিই— বাংলা আধুনিক গান। তারপর দশক বদলায়, রথে অশ্বসংখ্যাও বাড়তে থাকে। চিত্রগীতি, রবীন্দ্রসঙ্গীত। চার আর পাঁচের দশক পর্যন্ত মোটের ওপর গায়ক হেমন্ত এই তিন ধরনের গানেই নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছিলেন— এবং বলা বাহুল্য, ত্রিমুখী সাফল্যের হিসেবটিও হয়েছিল অভূতপূর্ব। কিন্তু, রবীন্দ্রসঙ্গীতের পাশেই যে আরেকটি সমান্তরাল ক্ষেত্র অতি সম্ভাবনাময় কিন্তু একটু কম-আলোকিত হয়ে পড়ে রয়েছে অতুলপ্রসাদ-দ্বিজেন্দ্রলাল-রজনীকান্ত-নজরুলের গান— সেদিকে এই তরুণ, মেধাবী ও শক্তিমান গায়ক কেন অনেকদিন পর্যন্ত অনাগ্রহী হয়ে ছিলেন, কেন নিজের বিজয়রথে এই চতুর্থ অশ্বটিকে সংযুক্ত করতে তিনি দেরি করলেন এত— ঠিক বোঝা যায় না। হয়তো এইসব গানের বাণিজ্যিক চাহিদা কম থাকা, একটা কারণ হতে পারে।
এই অন্যগোত্রের ‘বিবিধ গান’-এর (ক্যাসেটে এইভাবেই বর্ণিত হত) জগৎটিতে তাঁর কর্মকাণ্ড নিয়ে আমাদের মতো সঙ্গীতপ্রেমীদের তথা হেমন্ত-অনুরাগীদের কিছু আনন্দ—বিস্ময়ও আছে, আক্ষেপ-নৈরাশ্যও।
১৯৫৯ সালে— মনে রাখতে হবে তখন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের বয়স চল্লিশ-ছুঁই-ছুঁই— সেই প্রথম তাঁকে দেখা গেল এই নতুন দুনিয়াতে পা রাখতে। ‘ক্ষণিকের অতিথি’ ছবিতে তিনি প্রথম গাইলেন অতুলপ্রসাদের গান— ‘কে তুমি বসি’ নদীকূলে একেলা’। ঐ বছরেই, সম্ভবত গ্রামোফোন-রেকর্ডের দু-পিঠের দাবি পূরণের জন্যেই, তিনি অতুলপ্রসাদেরই আরেকটি গান রেকর্ড করেন। এটি নন-ফিল্ম— ‘জল বলে চল, মোর সাথে চল’। সে-সময় তাঁর কণ্ঠলাবণ্য ও দম একেবারে তুঙ্গে, অসামান্য শ্রুতিমধুর হল পরিবেশন দুটি। কিন্তু খুব কি জনপ্রিয় হয়েছিল, প্রচুর বাজার পেয়েছিল এ-গান, তাঁর অন্য গানের মতো? মনে হয় না। তাই, তখনও হেমন্তর সাঙ্গীতিক ভুবনে এই জঁর তেমন পাকাপোক্ত আসন পেল না। আরও পাঁচ বছর লেগে গেল পরের ধাপটি পেরোতে। ১৯৬৪ সালে ‘আরোহী’ ছবিতে গাইলেন দ্বিজেন্দ্রলালের গান— ‘তোমারেই ভালবেসেছি আমি’। খুব জনসমাদৃত হয়নি ছবি গান কোনোটিই, এবারে আর নন-ফিল্মও কিছু হল না। তারপর ফের দীর্ঘ ব্যবধান, ১৯৭০এ ‘দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন’ ছবিতে রজনীকান্তের গান ‘আমি অকৃতী অধম’। এই চিত্রগীতি-ভার্সনটিও খুব কিছু জনপ্রিয় হয়নি, অনেক পরে এই গানই আবার নন-ফিল্ম হিসেবে গেয়েছিলেন, সেটির কথায় পরে আসব। বছর-তিনেক চুপচাপ, তারপর রজনীকান্তের গানের একটি সংকলনের জন্য (১৯৭৩) গাইলেন দুটি গান— ‘ওই বধির যবনিকা’ আর ‘আমি তো তোমারে চাহিনি জীবনে’। সেই মধ্য-সাতের দশকে তাঁর গম্ভীর নিনাদী কণ্ঠ আর বয়সোচিত গভীর অভিব্যক্তি এই দুটি গানকে এক আশ্চর্য মাত্রা দিয়েছিল। বিশেষত ধীরলয়ে, প্রায় খালি-গলায় গাওয়া ‘আমি তো তোমারে চাহিনি জীবনে’ গানটি স্মরণীয় হয়ে আছে। নিবিষ্ট রসিকরা খুবই আপ্লুত হয়েছিলেন। ততদিনে এই ‘বিবিধ গান’-এর বেশ চাহিদা বেড়েছে, বেশ কয়েকজন শিল্পী শুধুই ওইধরনের গান রেকর্ড করেই পায়ের নীচে মাটি পাচ্ছেন। তবু হেমন্ত, রবীন্দ্রসঙ্গীত-গায়ক হিসেবে যেমন, ততখানি নিয়মিত বা ‘স্পেশালাইজড’ শিল্পী হিসেবে ওই ক্ষেত্রটিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে বিশেষ আগ্রহ দেখাননি।
আরও পড়ুন
হেমন্ত যদি চিনা খবরের কাগজও সুর করে পড়ে, লোকে শুনবে - বলেছিলেন দেবব্রত বিশ্বাস
১৯৭৫ সালে ‘অগ্নীশ্বর’ ছবিতে দ্বিজেন্দ্রগীতি ‘ধনধান্যপুষ্পভরা’ নিয়ে আবার বিবিধ-গানে ফিরলেন হেমন্ত। ছবিও প্রবল হিট, গানের প্রয়োগ এবং পরিবেশন দুইই অসাধারণ— শুরুর শব্দটিতে ‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা’ এই সামান্য ত্রুটিটুকু (অধিকাংশ শ্রোতা সেটি সম্পর্কে অবহিতই ছিলেন না) সত্ত্বেও এই গায়ন তুমুলভাবে গৃহীত হয়, লোকের মুখে-মুখে ফিরতে থাকে, বস্তুত গানটিই যেন নবজন্ম পায়। হয়তো এই সাফল্যের প্রভাবেই সাতের দশকের শেষার্ধ থেকে আটের দশকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এই ঘরানার অন্তর্গত নানাধরনের গানে নিজেকে প্রয়োগ করতে থাকেন। ১৯৭৭ সালে ‘দিন আমাদের’ ছবিতে রজনীকান্তের বিখ্যাত হাসির গান ‘যদি কুমড়োর মতো চালে ধরে র’তো’ গাইলেন অতি চমৎকার ভঙ্গিতে। পরের বছরই ঘটল তাঁর সঙ্গীতজীবনে এক উল্লেখযোগ্য ল্যান্ডমার্ক— হেমন্ত মুখোপাধ্যায় প্রথম কোনও ছবিতে নজরুলগীতি গাইলেন।
আরও পড়ুন
অসিতবরণের সূত্রেই যোগাযোগ আকাশবাণীতে, সেই প্রথম বেতারে গাইলেন হেমন্ত
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের নজরুলগীতি নিয়ে আমাদের আলাদা অনুচ্ছেদে আলোচনা করতেই হবে। কারণ তাঁর দীর্ঘ কেরিয়ারে অসংখ্য গগনচুম্বী সাফল্যের পাশে যে-কয়েকটি ব্যর্থতা আছে— ধরা যাক বোম্বাইয়ে ছবি প্রযোজনা, বেতারে ‘দেবীং দুর্গতিহারিণীং’ অনুষ্ঠান ইত্যাদি— তাদের মধ্যে একটি হল তাঁর নজরুলগীতি গাওয়ার প্রয়াস। ১৯৭৮এর ‘বারবধূ’ ছবিতে ‘চোখ গেল চোখ গেল’ আর ‘পথ চলিতে যদি চকিতে’ এই দুটি গান তিনি গাইলেন। সে-সময় তিনি এই ক্ষেত্রটির প্রতি উৎসাহিত হয়েছিলেন বোঝা যায়, কারণ কাছাকাছি সময়েই আকাশবাণীতে পর পর তিনি নজরুলের গান গাইলেন, যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে তার প্রচার হয়েছিল। গানগুলি ছিল— ‘সেদিনও বলেছিলে’, ‘পথ চলিতে’, ‘এ কী সুরে তুমি গান শোনালে’ আর ‘বসিয়া বিজনে’। তাঁর নজরুলগীতিগুলি একসঙ্গে প্রকাশ করাও হয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশ শ্রোতাই, এমনকী তাঁর খুব একনিষ্ঠ ভক্ত শ্রোতারাও, বেশ হতাশ হয়েছিলেন গানগুলি শুনে। নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দ্রুতই ছড়িয়ে পড়েছিল। পরে আর কখনও নজরুলের গান করেননি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ওই উৎসাহিত-পর্ব চলাকালীনই ‘লায়লা মজনু’ নামক এক ছবিতে ‘লায়লি তোমার এসেছে ফিরিয়া’ গানটিও রেকর্ড করেছিলেন তিনি, কিন্তু ছবিটি মুক্তি পায়নি। পরে প্রকাশ্যে আসে গানটি, তবে খুব আশাব্যঞ্জক কিছু সেখানেও ছিল না।
আরও পড়ুন
শুধু উত্তমকুমারই নন, অন্যান্য নায়কদের কণ্ঠেও অবিস্মরণীয় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
প্রশ্ন হল, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মতো গায়ক কেন নজরুলের গানে প্রায়-ব্যর্থ হলেন?
এর উত্তর তিনটি ভাগে দেওয়া যায়। প্রথমত, সেই সাতের দশকের মাঝামাঝি বা শেষদিকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠের যে-বৈশিষ্ট্য, তা অন্য গানে তখনও অমোঘ হলেও — নজরুলের গানের উপযোগী ততটা ছিল না। তখন তাঁর দমে বেশ ঘাটতি এসেছে, ফলে কিছু শ্লথ হয়েছে গায়ন। মন্দ্র ব্যারিটোনটি অসামান্য হলেও, উঁচু-পরদায় অসুবিধা শুরু হয়েছে। এককথায়, নজরুলগীতির জন্য যে-চঞ্চল, দ্রুতগতি, ত্রিসপ্তকবিহারী গায়ন দরকার, সেটি তখন তিনি দিতে অপারগ। দ্বিতীয়ত, সাধারণভাবে নজরুলগীতিতে সফল হতে গেলে কিছুটা ক্লাসিকাল রেওয়াজ বা তালিম-প্রাপ্ত গায়নশৈলী দরকার হয়, সেটা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ছিল না। ফলে, গানের মধ্যেকার ছোট-ছোট সূক্ষ্ম কাজ, মুড়কি-হরকত-ফেরত ইত্যাদি কায়দাগুলি যে-গায়ক যথাযথ দিতে পারবেন না, এ-গানে তাঁর খুব বেশি ভবিষ্যৎ নেই। এটা সম্ভবত হেমন্ত বুঝতে একটু দেরি করে ফেলেছিলেন। শেষত, যে-সময় তিনি নজরুলগীতির দুনিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা করলেন, ততদিনে তাঁর সমসাময়িক এমনকী অনুজ শিল্পীদের মধ্যেও অনেকেই ঐ জঁরে প্রতিষ্ঠা-জনপ্রিয়তা পেয়েছেন এবং শ্রোতাদের সামনে উৎকৃষ্ট তথা আদর্শ গায়নের মডেল এনে ফেলেছেন। বোধহয় তাঁর গানের নির্বাচনেও একটু বিবেচনার ফাঁক থেকে গিয়েছিল। ‘স্পেশালাইজড’ নজরুলগীতি-গাইয়েদের কণ্ঠে এইধরনের গান ইতোমধ্যেই যে-উচ্চতায় উঠে গিয়েছিল, মধ্য-পঞ্চাশ পেরোনো প্রৌঢ় হেমন্তর পরিবেশন সেগুলির মান স্পর্শ করতে পারেনি। তাঁর অভিব্যক্তি সুন্দর ছিল, চেষ্টা ছিল আন্তরিক— কিন্তু হায়, তাঁর কণ্ঠ-সামর্থ্য আর সেই তুঙ্গে নেই। আমার ব্যক্তিগত মত, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠমাধুরী, দম ও সপ্তকবিহারের সাবলীলতা মিলে সামগ্রিক দক্ষতার শীর্ষ-পর্ব ছিল ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৫, এই দশ বছর। এই সময়সীমার মধ্যে তাঁর মীড় ও স্পর্শস্বর-সমৃদ্ধ সতেজ কণ্ঠের চলনের সঙ্গে মানানসই বেশ কিছু নজরুলগীতি যদি রেকর্ড করানো যেত, তা বাংলা গানের স্মরণীয় সম্পদ হয়ে থাকতে পারত।
আবার আমরা অন্য গানের প্রসঙ্গে আসি। ১৯৭৬ সালে, অর্থাৎ যখন তিনি নজরুলগীতিতে ব্যর্থ হচ্ছেন প্রায় সেই সময়েই হেমন্ত আবার এক সংকলনের জন্য দুটি রজনীকান্তের গান গাইলেন, ‘আমি অকৃতী অধম’ ও ‘দেখ দেখি মন নয়ন মুদে ভাল করে’। এই গায়ন, বস্তুত, একেবারে অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছে।
উল্লেখ্য, এইসব গানেরও একধরনের অর্থোডক্স গায়কী চালু আছে, যা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গায়নভঙ্গির সঙ্গে মেলে না। কিন্তু, প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে এইধরনের গান রেকর্ড করেও, তিনি বরাবর এগুলি পরিবেশন করেছেন সম্পূর্ণ নিজের স্টাইলে। প্রথাগত সেইসব অলংকৃত ও অপেক্ষাকৃত জটিল গায়কী নয়, হেমন্ত শুরু থেকেই গেয়ে আসছেন একেবারেই নিজের গায়কীর ছাঁচে ঢেলে, হ্যাঁ, কিছু-বা খাঁজখোঁজ সরল করে নিয়েই। কিন্তু আমরা বলতে বাধ্য— তাঁর আগে, সমসময়ে বা পরেও এইসব গান এর চেয়ে মর্মস্পর্শী অভিব্যক্তিতে আর কেউ গাইতে পেরেছেন বলে মনে হয় না।
তবু, নিয়মিত হল না ধারাটি। আবার অনেকটা ব্যবধান। ১৯৮১তে ‘ফাদার’ ছবিতে ফের গাইলেন ‘ধনধান্যপুষ্পভরা’। পরের বছর ‘খেলার পুতুল’ ছবিতে অতুলপ্রসাদের গান ‘ক্রন্দসী পথচারিণী’। গলায় বার্ধক্য থাবা বসিয়েছে, কিন্তু ধীরলয়ের গানটিতে অতি অপরূপ দরদী অভিব্যক্তি— যা একান্তভাবে তাঁর স্বকীয় গুণ। ১৯৮৩তে আবার অতুলপ্রসাদের গান, ‘চেনা অচেনা’ ছবিতে— ‘আমায় রাখতে যদি আপন ঘরে’। বাচনভঙ্গি পর্যন্ত কিঞ্চিৎ জরাগ্রস্ত শোনায় এখানে, শ্বাসের সংকট, তবু এমন অননুকরণীয় ভাব-প্রকাশ, সামান্য ডিলে-অনুরণন সমেত এক আশ্চর্য বিষণ্ণ-মধুর কণ্ঠস্বর— সব দুর্বলতা ছাপিয়ে স্তব্ধ করে রাখে শ্রোতাদের। ১৯৮৫ সালে শেষবার ‘অজান্তে’ ছবিতে তাঁর কণ্ঠে শোনা গেল অতুলপ্রসাদী— ‘কেন এলে মোর ঘরে’, সহগায়িকার সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে। এই একই গান আর ‘তব অন্তর’ — এই দুটি অতুলপ্রসাদী নন-ফিল্ম রেকর্ডেও বেরিয়েছিল। কণ্ঠ তখন খুব অশক্ত, কিন্তু অভিব্যক্তি আর মেধা দিয়ে উত্তীর্ণ করে দিচ্ছেন।
সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই দশকের একটা যাত্রাপথ। সময় কিছু কম নয়, কিন্তু গড় ধরলে বছরে একটাও দাঁড়াচ্ছে না, তারও কম — এই হিসেবে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এই ‘বিবিধ গানে’র জগৎ ছুঁয়ে গেছেন। কিছু কাঁটা কিছু ফুল উঠেছে ডালিতে। সার্বিক মূল্যায়ন করতে বসলে মনে হয়, তাঁর সমগ্র কেরিয়ারের স্বর্ণোজ্জ্বল ছটার তুলনায় এই ক্ষেত্রটি খানিক ম্লান হয়েই রয়ে গেল বুঝি। আফসোস হয়, আরও অনেক গাইতে পারতেন, সেরা সময়টির পূর্ণ উপযোগ করতে পারতেন। কিন্তু, সেই আক্ষেপ-অপূর্ণতার মধ্যেও, যখন কোনও অতর্কিত মুহূর্তে তাঁর স্বর্ণকণ্ঠে ‘কে তুমি বসি নদীকূলে একেলা’ বা ‘আমি তো তোমারে চাহিনি জীবনে, তুমিই অভাগারে চেয়েছ’-র মতো গান কানে ঢুকে পড়ে, মনে হয়— পরবর্তী কয়েক মিনিটের রুদ্ধবাক সম্মোহিত দশাটুকুর জন্যই তো একটা গোটা জীবন পেরিয়ে আসা যায়! অন্তত এই নিবন্ধলেখক তো আমৃত্যু ভুলতে পারবে না যে, তরুণবয়সে এক নির্জন শীতসন্ধ্যায় রেডিওতে হঠাৎ যে-গানখানি শুনে সে একলা ঘরে কে-জানে-কেন নীরবে অশ্রুপাত করেছিল এবং পরের দিনই তার সদ্য-ভালোবাসার নারীকে প্রথমবার গেয়ে শুনিয়েছিল— সেই গান কোনও আধুনিক প্রেমসঙ্গীত নয়, ফিল্মের গান নয়, এমনকী রবীন্দ্রনাথেরও নয়। সে-গান ছিল ‘আমি অকৃতী অধম বলেও তো কিছু কম করে মোরে দাওনি’— সেই ১৯৭৬ সালের হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া রজনীকান্ত!
মনে হয়, এর পরে অন্তত তার মতো ব্যক্তির পক্ষে আর আফসোস-আক্ষেপ সাজে না। অকৃতী অধম সে, তবু তাকে তিনি— হেমন্ত মুখোপাধ্যায়— কম করে কিছু দেননি।
Powered by Froala Editor