পেশায় শ্রমিক, মাটি কাটছেন ভরদুপুরে, বিকল্প জীবিকার আর্জি ভাইরাল ‘চা-কাকু’র

কয়েকদিন আগেই একটা ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। জনতা কারফিউ-এর দিন চায়ের দোকানে ভিড়। ভিডিওগ্রাহকের সাবধানবাণীর প্রত্যুত্তরে, ভিড়ের মধ্যেই এক ভদ্রলোক কাতরকণ্ঠে বলে ওঠেন, "আমরা চা খাবো না?"

ভিডিও ভাইরাল হতে হতেই 'চা-খাবো না?’ কাকু-কে নিয়ে মেতে ওঠেন নেটিজেনরা। অসংখ্য মিম-ট্রোলে ভরে যায় ফেসবুক। "আমরা কি চা খাবো না? চা কি খাবো না আমরা?" হাসি-ঠাট্টা-খেউড় চলতে থাকে। সঙ্গে অশ্রাব্য গালিগালাজ। পুরুষ্টু, গোঁফওয়ালা ভদ্রলোককে অনেকে তুলনা করেছেন অসুরের সঙ্গে। সে যাহোক। তবে, এতকিছুর মাঝেও চাপা পড়ে গিয়েছে তাঁর আসল পরিচয়।

আরও পড়ুন
স্প্যানিশ ফ্লু কিংবা বিশ্বযুদ্ধে কাবু হননি, করোনাকেও হারিয়ে দিলেন ১০১ বছরের বৃদ্ধ

ভূতপূর্ব 'চা-কাকু', অথবা 'অসুর', পেশায় শ্রমিক। ঘরামির কাজ করেন। নাম মৃদুল। এই কারফিউ-চলাকালীন তিনি কাজ চালাচ্ছেন। দুপুর রোদে মাটি কাটছেন। কাজ না করলে জুটবে না ভাত। চড়বে না, হাঁড়ি। সরকারের সাহায্য তাঁর কাছে পৌঁছেছে কিনা জানা নেই। যদি পৌঁছত, তিনিও হয়তো কারফিউ মেনে চলতেন।

https://www.facebook.com/nirmalya.dasgupta/videos/10158231193222164/

আরও পড়ুন
বাতাসেই করোনা মারবে এই মেশিন, চমকপ্রদ আবিষ্কার বাঙালি গবেষকের

আজ সকালে নির্মাল্য দাশগুপ্ত বলে এক নেটিজেন, পাড়ার বিখ্যাত 'চা-কাকু'র একটি ভিডিও করেছেন। সম্বোধন করেছেন বুড়ো বলে। তাঁর বয়ানে, "বুড়ো এখন সেলিব্রেটি।" খানিক ব্যঙ্গ করেই বলেছিলেন কথাটা। উত্তরে ঈষৎ বিরক্ত মৃদুলদা বলছেন, "সবাই আসছে, ছবি তুলছে, চলে যাচ্ছে।" অথচ তাঁর দিকে একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে হয়তো কেউ দেয়নি। এমনকি 'এক কাপ চা পর্যন্ত খাওয়ায়নি।'

তাই আবার লেগে পড়েছেন কাজে। গরীবের আবার লক-ডাউন কী!

আরও পড়ুন
ছেঁড়া রেনকোট-হেলমেট পরেই করোনার সঙ্গে লড়াই চিকিৎসকদের

হয়তো কারফিউ'র দিন বেরিয়ে খুবই অন্যায় করেছেন। হয়তো করোনা ভাইরাসের সাবধানবাণী তাঁর কর্ণকুহরে প্রবেশ করেনি। প্রসঙ্গত বলে রাখা উচিত, কারফিউ-এর ফলে ভারতে ২২ জন অসংগঠিত শ্রমিক মারা গিয়েছেন অনাহারে। পৌঁছয়নি সাহায্য। রেশন। মৃদুলদাবাবুও এই বৈষম্যমূলক ব্যবস্থাটারই শিকার। দিন চালানোর জন্য যৎসামান্য খুদকুঁড়ো পেলে হয়তো বেরোতেন না আর কাজে।

সন্ধেবেলা আরেকটি ভিডিও-ও এসেছে প্রকাশ্যে। তাতে দেখা যাচ্ছে মৃদুলবাবু ও তাঁর ছেলেকে। ছেলেটি দর্শকদের কাছে কাতর অনুরোধ জানাচ্ছে, তার ‘সেলিব্রিটি’ বাবাকে একটা ভালো কাজের জোগাড় করে নিতে। সংসারের একটু সুরাহা হোক। দুটো ভদ্রস্থ রোজগার আসুক ঘরে। বাবাকে যেন আর মাটি কাটতে না যেতে হয়।

আরও পড়ুন
করোনা ‘ছড়ানো’র অভিযোগ, নিজের আবাসনেই হেনস্থার মুখে পিয়ারলেসের চিকিৎসক

https://www.facebook.com/100002974637061/posts/2632567340185728/

আরও পড়ুন
শাঁখ, উলুধ্বনি, বাজিতে উত্তাল গোটা দেশ, করোনার সঙ্গে দীর্ঘযুদ্ধের প্রস্তুতি?

এরপরও কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবেন কিনা, জানা নেই। হয়তো এই আবেদন বৃথাই যাবে। যেমন হয় আর-পাঁচটা ক্ষেত্রে। মৃদুলবাবু তাঁর গতানুগতিক পেশাতেই আটকে থাকবেন, টেনেটুনে চলবে সংসার। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে নিয়ে মস্করা হবে আরও কিছুদিন। তারপর, ভুলে যাবে সবাই। আবার নতুন কেউ। আবার নতুন মিম, ট্রোল। এসবের মধ্যেও, যদি কিছু করা যায় তাঁর জন্য, যদি কোনো বিকল্প কাজ দিতে পারেন কেউ, এই চাওয়াটুকু রইল মানুষের কাছে। মানুষ চাইলে সব পারেন। এটুকু পারবেন না?