সান্টা নয়, এই দেশে ক্রিসমাসের সময় হাজির হয় ভয়ালদর্শন মানুষরা!

আর মাত্র একদিন পরেই হাজির হচ্ছে ২৫ ডিসেম্বর। যতই করোনা আবহ থাকুক, এই মরসুমে সব কিছু ভুলে আলোর সন্ধানে ব্যস্ত মানুষ। ক্রিসমাস ইভে গোটা পৃথিবী সাক্ষী থাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের। সেখানে থাকে প্রার্থনা, থাকে আনন্দ, মঙ্গলকামনা। হঠাৎ যদি সেই ক্রিসমাস ইভই আপনার ভয়ের কারণ হয়? আপনার সামনে যদি হাজির হয় অদ্ভুত দর্শন কিছু ‘মানুষ’?

ক্রিসমাস মানেই সান্টা ক্লজ— এই কথাটি একপ্রকার নিয়ম হয়ে গেছে। বালিশের পাশে মোজা রেখে ঘুমনো, এবং অপেক্ষা করা কখন স্লেজগাড়িতে চেপে আসবে সান্টা বুড়ো আর উপহার রেখে যাবে। আজও ছোটোরা এমন রূপকথার জগতে থাকতেই ভালোবাসে। কিন্তু আইসল্যান্ড একটু যেন ব্যাতিক্রম। সান্টা-কে অবশ্যই আপ্যায়ন করে এই দেশের বাসিন্দারা; কিন্তু সেইসঙ্গে রয়েছে তাঁদের নিজস্ব ‘সান্টা’ও। তাও একজন নয়, তেরো জন! কিন্তু ওই বুড়োর মতো এত ভালো আর সুদর্শন নয় এরা। আর এখানেই লুকিয়ে আছে আইসল্যান্ডের ক্রিসমাস ইভের অদ্ভুত ঐতিহ্য… 

২৫ ডিসেম্বরের তেরোদিন আগে থেকেই আইসল্যান্ড মেতে ওঠে উৎসবে। পাশ্চাত্যের বাকি দেশগুলির মতোই সেজে ওঠে দেশটি। সেইসঙ্গে হাজির হয় ‘ইয়ুল ল্যাড’রা। আসলে, এরাই আইসল্যান্ডের প্রাচীন ‘সান্টা’। এখানকার লোকগাথার সঙ্গে জুড়ে আছে এই ১৩ জন। এই ইয়ুল ল্যাডদের পরিচয় কী? এরা প্রত্যেকেই খর্বকায় বামন; ঠিক ‘স্নো হোয়াইট’ গল্পের মতো। প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা নাম আছে, রয়েছে ভিন্ন বৈশিষ্ট্য। এবং আরও বড়ো ব্যাপার হল, এরা প্রত্যেকেই সহোদর। ঠিক ক্রিসমাসের সময়ই এই ১৩ জন নেমে আসে আইসল্যান্ডের মাটিতে। তারপর শুরু হয় ‘বিশেষ’ উৎসব… 

আইসল্যান্ডের লোকগাথা বলে, পাহাড়ের কোলে মা গ্রাইলা এবং বাবা লেপ্পালুডির সঙ্গে থাকে এরা। আর থাকে তাদের পোষা ইয়ুল বিড়াল। লেপ্পালুডি অলস; আর গ্রাইলা ততধিক ভয়ানক। যেমন তার চেহারা, তেমন তার স্বভাব। ওর কাজই হল দুষ্টু ছেলেদের খুঁজে বের করা। আর এই কাজে তার সঙ্গী হল বিশালাকার পোষা কালো ইয়ুল বিড়াল। ১৩ জন ইয়ুল ল্যাডের সঙ্গে এরাও যে দোসর। ঠিক ক্রিসমাসের সময়ই এদের কাহিনি শুরু। এবং শুরু ‘ভয়’-এর… 

আজ আইসল্যান্ডের দোকানে দোকানে ইয়ুল ল্যাড, গ্রাইলাদের পুতুল-পোশাক বিক্রি হয়। অনেকে সেই পোশাক পরে বেরও হন ক্রিসমাস ইভে। উদ্দেশ্য, মজা করা। বলা হয়, ক্রিসমাসের দিন বাড়ির বাইরে জুতো-মোজা রাখলে, এই ইয়ুল ল্যাডরা আসে। যারা ভালো, তাদেরকে মন ভরে চকোলেট, লজেন্স উপহার দিয়ে যায়। কিন্তু যারা খারাপ, দুষ্টুমি করে, তারা এসব পায় না। বরং সেখানে রাখা হয় পচা আলু। এ তো গেল ইয়ুল ল্যাডদের কাহিনি। এদের মা গ্রাইলা আর তার বিড়ালটিও যে রয়েছে। এই একটা ব্যাপারে এখনও ভয় পায় আইসল্যান্ডের শিশুরা। কারণ, যে সব শিশুরা ক্রিসমাসের দিন একটিও নতুন পোশাক পরবে না, তাদেরকে খেয়ে নেবে গ্রাইলারা!… 

আদতে দেখতে গেলে, সবার মধ্যে যাতে খুশি ও আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে সেই চেষ্টাতেই এমন উৎসব। কেউ যাতে খারাপ কাজ না করে, সব্বার মুখে যাতে হাসি থাকে তারই চেষ্টা। কিন্তু একটা সময় এতটা ‘নম্র’ ছিল না ইয়ুল ল্যাডের লোকগাথা। ঐতিহাসিকরা বলেন, অষ্টাদশ শতকেও এটির ব্যাপক প্রচলন ছিল আইসল্যান্ডে। সান্টার কাহিনির পাশে এভাবে একটি লোকগাথা সাড়া ফেলতে পারে, সেটাই ছিল আশ্চর্যের। তবে সান্টার মতো নরম ছিল না সেই ছবিটা। বরং এই ইয়ুল ল্যাড, গ্রাইলার কাহিনি যাতে বাচ্চাদের না শোনানো হয় সেই নিয়ম চালু ছিল। এতটাই ভয়ানক ছিল এই লোকগাথা। 

আরও পড়ুন
বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা, কৃষ্ণাঙ্গ সান্তা ক্লজের জন্ম দিয়েছিল মার্কিন প্রদেশ

কালের নিয়মে এগিয়েছি আমরা। আজ আধুনিক হয়েছে বিশ্ব; কিন্তু এই গল্প, চরিত্রেরা আজও একইরকম থেকে গেছে। গোটা বিশ্বে যেমন সান্টা ক্লজ রাজত্ব করছে, ঠিক তেমনই আইসল্যান্ডের বরফঘেরা দেশে ছড়িয়ে আছে ইয়ুল ল্যাডরা। আজও এই ১৩ ভয়ানক বামন এবং তাদের পরিবাররা ছড়িয়ে আছে এখানে। আইসল্যান্ডের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ দেখা হলেও হয়ে যেতে পারে! 

Powered by Froala Editor

More From Author See More