কিছুদিন আগের কথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে উঠে এসেছিল মহামারীকালীন সময়ে ক্রমবর্ধমান অপরাধ এবং লিঙ্গবৈষম্যের কথা। সেই রিপোর্টে বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়েছিল গার্হস্থ্য হিংসার প্রসঙ্গে। ২০২১ সালে দাঁড়িয়ে বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মহিলাই গার্হস্থ্য হিংসার শিকার, এমনটাই জানিয়েছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। শুধু ভারতই নয়, ইউরোপ এবং আমেরিকার মতো উন্নত দেশেও সেই হার ঊর্ধ্বমুখী। সাম্প্রতিক সময়ে, এই ক্রমবর্ধমান গার্হস্থ্য হিংসার (Domestic Violence) মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে নতুন পথ দেখাচ্ছে আইসল্যান্ড (Iceland)।
‘উইন্ডো’। শুধুমাত্র গার্হস্থ্য হিংসা রুখতেই এই বিশেষ বাহিনীর তৈরি করেছে আইসল্যান্ডের পুলিশ বিভাগ। মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নির্যাতিতাকে উদ্ধার এবং নির্যাতনকারীকে গ্রেপ্তার করতে সংকল্পবদ্ধ আইসল্যান্ডের এই পুলিশি দপ্তর। একমাত্র দ্রুত পদক্ষেপই এই ধরনের ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে বলেই অভিমত আইসল্যান্ড প্রশাসনের।
মহিলাদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত দেশ হিসাবে পরিচিতি রয়েছে আইসল্যান্ডের। লিঙ্গ অনুপাতের দিক থেকেও ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে সামনের সারিতেই রয়েছে আইসল্যান্ড। তা সত্ত্বেও সে-দেশে বিগত ৭ বছরে গার্হস্থ্য হিংসার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ২২ শতাংশ। যা যথেষ্ট আশঙ্কা জনক। এমনকি গার্হস্থ্য হিংসার কারণে নারী ও শিশু মৃত্যুরও একাধিক ঘটনা ঘটেছে আইসল্যান্ডে।
আশঙ্কার বিষয় হল, সাধারণ অপরাধের মতো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রকাশ্যে আসে না গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনা। কিংবা পুলিশের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলেও, অনেক নির্যাতিতাই প্রকাশ্যে আনতে চান না তাঁদের পরিচয় কিংবা অবস্থান। সেই কারণে পরিসংখ্যানের থেকেও বাস্তব ঘটনার সংখ্যা অনেকটাই বেশি বলে অনুমান আইসল্যান্ড প্রশাসনের।
আরও পড়ুন
গার্হস্থ্য হিংসা রুখতে পাঠ্যপুস্তকে বদল, মহিলাদের জন্য বিশেষ আদালতও গড়ছে কেরালা
এই ঘটনার ইতি টানতেই গড়ে উঠেছিল আইসল্যান্ড পুলিশ বাহিনীর বিশেষ বিভাগ ‘উইন্ডো’। নির্যাতিতা কিংবা কোনো অভিযোগকারীর ফোন পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঘটনাস্থল ট্র্যাক করে বার করা থেকে শুরু করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য গড়ে তোলা হয় বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাহিনী। সেইসঙ্গে বদল আনা হয় আইনেও। আদালতে ছ’মাসের মধ্যেই এই ধরনের ঘটনার বিচার সম্পূর্ণ করার নিদান দিয়েছে আইসল্যান্ডের সংবিধান ও মানবাধিকার বিভাগ। তাতে সুবিচার পেয়েছেন অনেক নির্যাতিতাই।
আরও পড়ুন
বিশ্ব এক-চতুর্থাংশ নারীই গার্হস্থ্য যৌন হিংসার শিকার : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
আইসল্যান্ডের এই পুলিশি তৎপরতাই আশা দেখাচ্ছে গার্হস্থ্য হিংসামুক্ত সমাজের। আগামীদিনে অন্যান্য দেশেও এই ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হলে, অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে গার্হস্থ্য হিংসা এবং লিঙ্গ বৈষম্যের ঘটনা— তা বলা যায় নিশ্চিতভাবেই। সেক্ষেত্রে ভারতের মতো দেশের কাছে মডেল হয়ে উঠতে পারে আইসল্যান্ডের এই আইনি পরিকাঠামো…
আরও পড়ুন
গার্হস্থ্য হিংসায় বন্দি মহিলাদের নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দেবে কলেজ পড়ুয়ারাই!
Powered by Froala Editor