বিগত চার দশকে সর্বনিম্নে পৌঁছাল আন্টার্কটিকার বরফ

২০২১ সাল, ২৫ ফেব্রুয়ারি। গোটা বিশ্বজুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল গবেষকদের প্রকাশিত তথ্য নিয়ে। আন্টার্কটিকায় বরফের চাদরের পরিমাণ সেবারই প্রথম ২ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটারের তলায় চলে গিয়েছিল। সিঁদুরে মেঘ দেখেছিলেন অনেকেই। কেউ আবার বলেছিলেন, উপযুক্ত পদক্ষেপ নিলে ধীরে ধীরে সেরে উঠবে আন্টার্কটিকা (Antarctica)। এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার ঠিক দু’বছরের মধ্যেই আরও এক রেকর্ড তৈরি হল বিশ্বের শীতলতম মহাদেশে। বরফের গলনে (Ice Melting) ২০২১-এর রেকর্ড ভাঙল ফের। 

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ইন্টারন্যাশনাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টারের প্রকাশিত তথ্য জানাল, আন্টার্কটিকায় অবশিষ্ট বরফের চাদরের পরিমাণ ১.৯১ মিলিয়ন বর্গ কিমি। অর্থাৎ, ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার বরফের চাদরে গলেছে শুধু বিগত ২ বছরে। ১৯৭৮ সাল থেকে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আন্টার্কটিকার বরফের পরিমাণ গণনা শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। তার পর কেটে গেছে সাড়ে চার দশক। আর এই ৪৫ বছরের ইতিহাসে সর্বনিম্নে পৌঁছাল আন্টার্কটিকার বরফ। 

তবে এখানেই শেষ নয়, চলতি মাসে আরও গলতে পারে আন্টার্কটিকার বরফের পরিমাণ, অনুমান বিশেষজ্ঞদের। আর তার কারণ, দক্ষিণ গোলার্ধে এখনও গ্রীষ্ম শেষ হয়নি। পরিবর্তন হয়ে চলেছে তাপমাত্রার। ফলে আগামী ২ সপ্তাহে এই পরিসংখ্যানে ফের বদল আসতে পারে বলেই ধারণা গবেষকদের। 

অবশ্য গবেষকদের মতে এই ঘটনা কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। বরং, মানুষের ধারাবাহিক কার্যকলাপ এবং প্রকৃতির ওপর অত্যাচারের কারণেই আন্টার্কটিকায় বরফের গলন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় পরিণত হয়েছে। কলোরাডো বোল্ডার বিশ্ববিদ্যালয়ের হিম-বিদ টেড স্ক্যাম্বোসের কথায়, প্রতি শীতকালে বরফের চাদর সারিয়ে তোলার সুযোগ পায় আন্টার্কটিকা। বছরের পর বছর ধরে সেভাবেই টিকে এসেছে হিমাবৃত মহাদেশটি। তবে গ্রিনহাউস গ্যাস ও অন্যান্য গ্যাসের মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণের কারণে সেরে ওঠার সেই ক্ষমতা হারিয়েছে আন্টার্কটিকা। ফলে, প্রতি বছর শীতে বরফপাতের পরিমাণ পাল্লা দিয়ে উঠতে পারছে না গ্রীষ্মের বরফ গলনের সঙ্গে। 

পাশাপাশি আন্টার্কটিকার হিমবাহগুলির মৃত্যুর আরও একটি বড়ো কারণ হল, সমুদ্রস্রোত। আর্কটিকের মতো স্থলভাগ দ্বারা আবৃত নয় আন্টার্কটিকা। বলতে গেলে আন্টার্কটিকা পুরোটাই অবস্থিত দক্ষিণ মহাসাগরের বুকে। ফলে, শীতকালে প্রতিবছর পরিধি বৃদ্ধি করতে পারত এই মহাদেশ। অরীয়ভাবে বৃদ্ধি পেত বরফের পরিমাণ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে জাহাজ চলাচল ও সামুদ্রিক খননের কারণে ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে চলেছে দক্ষিণ মহাসাগরের জল। আর এই সমুদ্রস্রোত আরও বেশি করে গলিয়ে ফেলছে আন্টার্কটিকার বরফকে। যা পৃথিবীর ধ্বংসের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলেই অভিমত গবেষকদের একাংশের…

Powered by Froala Editor

More From Author See More