পৃথিবীর সবচেয়ে হিংস্র প্রাণীগুলির একটি অবশ্যই বাঘ। কিন্তু বাঘের প্রতি মানুষের যে আচরণ, তাও কম হিংস্র নয়। গত এক শতাব্দীতে বাঘের সংখ্যা কমেছে ৯০ শতাংশ। আর এর জন্য দায়ী পরিবেশের ওপর মানুষের অত্যাচার। শুধুই বাঘ নয়, ব্যাঘ্র শ্রেণির আরেক প্রাণী জ্যাগুয়ারের (Jaguar) অবস্থাও সংকটজনক। গত ৫ দশকে জ্যাগুয়ারের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। সম্প্রতি ‘কমিউনিকেশনস বায়োলজি’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে এমনটাই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। আর এই বিপর্যয়ের পিছনে দায়ী জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে তৈরি একাধিক বাঁধ ও জলাধার। জীবাশ্ম জ্বালানির ঘাটতি মেটাতে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার বহু দেশ জলবিদ্যুৎ ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। কিন্তু পরিবেশ এবং বাস্তুতন্ত্রের ওপর তার কু-প্রভাবও নেহাত কম নয়।
জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কার্বন নিঃসরণ প্রায় হয় না বললেই চলে। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন হয় বড়ো জলাধার। সেইসঙ্গে সারা বছর নদীতে জলের প্রবাহ বজায় রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই কারণেই অরণ্যের স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্রকে ধ্বংস করতেই হয়। কয়েক বছর আগে আমেরিকার কলোরাডো অঞ্চলে একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদাহরণটিই ধরা যাক। এই কেন্দ্র নির্মাণের জন্য একটি অরণ্যকে অন্তত ১০০টি টুকরোতে ভেঙে ফেলা হয়। ফলে বন্য প্রাণীদের চলাফেরার জায়গাও সংকুচিত হয়ে আসে। আর এসবের কারণেই বাঘ, জ্যাগুয়ার এবং অন্যান্য বড়ো প্রাণীদের বেঁচে থাকা সবচেয়ে কঠিন হয়ে উঠেছে। যদিও নানা সংরক্ষণ প্রকল্পের কারণে সম্প্রতি বাঘের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। তবে তার পরেও সারা পৃথিবীতে বাঘের সংখ্যা ৩৫০০-র বেশি নয়। আর জ্যাগুয়ারের সংখ্যাও ক্রমশ কমে আসছে।
ইউনিভার্সিটি অফ পোরটো, সাউথার্ন ইউনিভার্সিটি সহ আমেরিকার একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মিলিত গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি না থাকলে এর মধ্যে বাঘের সংখ্যা অন্তত ২০ শতাংশ বেশি হত। আর জ্যাগুয়ারের সংখ্যাও এত কমত না। তবে এখনও উপায় রয়েছে। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা কমিয়ে আনলে আসন্ন সংকট মোকাবিলা করা অনেকটাই সম্ভব হবে। অথচ বাস্তবে দেখা গিয়েছে, আগামী ১০ বছরের মধ্যে আরও অন্তত ১ হাজারটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার মতো দেশের প্রস্তাবিত প্রকল্পের সংখ্যাই বেশি। আর এইসমস্ত দেশেই সবচেয়ে বেশি জ্যাগুয়ারের বাস। সাম্প্রতিক এই সমীক্ষার পরে কি আদৌ সচেতন হবেন রাষ্ট্রনায়করা? নাহলে অরণ্যের বাস্তুতন্ত্রের শেষ সময় সত্যিই ঘনিয়ে এসেছে।
Powered by Froala Editor