বিশ শতকের শুরুর দিক সেটা। হায়দ্রাবাদের বুকে ৬.৫ একর জমির ওপর প্রকাণ্ড এক প্রাসাদ গড়ে তুলেছিলেন কামাল খান। স্বাভাবিকভাবেই এই প্রাসাদ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল যুবরাজ সপ্তম মীর ওসমান আলির। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১১ বছর। তাঁর অনুরোধ ফেলতে পারেননি কামাল খান। বিক্রি করে দেন প্রকাণ্ড এই প্রসাদ। বাবার সঙ্গে চৌমহল্লা প্রাসাদে না থেকে এই প্রাসাদেই চলে এসেছিলেন নিজাম মীর ওসমান আলি। আমৃত্যু থেকেছেন এই প্রাসাদেই। এবার ঐতিহ্যবাহী এই প্রাসাদই যেন প্রমাদ গুনছে মৃত্যুর।
কয়েকদিন আগের কথা। বেশ কিছু দক্ষিণ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের পাতাতেই জায়গা করে নিয়েছিলও নাজরি বাগ বা কিং কোঠি প্যালেস-খ্যাত (King Kothi Palace) শেষ নিজাম ওসমান আলির (Nizam Osman Ali) এই প্রাসাদ। নীহারিকা ইনফ্রাস্ট্রাকচার নামের একটি বেসরকারি সংস্থা এই প্রাসাদ ভেঙে নির্মাণ করতে চলেছে বহুতল। অভিযোগ উঠেছিল এমনটাই। তবে মাত্র দু’দিনের মধ্যে তৎপরতার সঙ্গেই প্রত্যুত্তর দেয় সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি। তাঁদের দাবি, কর্মকর্তাদের বিশেষ দল পাঠানো হয়েছিল ঘটনাস্থলে। সংশ্লিষ্ট ভবনটিতে এই ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড হয়নি বলেই অভিমত তাঁদের।
স্থানীয় বাসিন্দা, পরিবেশকর্মী এবং ঐতিহাসিকরাই প্রথম প্রশ্ন তুলেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিগত কয়েকদিন ধরেই কিং কোঠি প্রাসাদ থেকেই অস্বাভাবিকভাবে ধুলো উড়তে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এমনকি পাথর ভাঙার শব্দও পেয়েছিলেন কেউ কেউ। অভিযোগ এমনই। তবে এই সবটাই রহস্যে মোড়া। কারণ, কিং কোঠি প্রাসাদ এখনও অক্ষত। অন্তত প্রাচীরের বাইরে থেকে দেখলে তার গায়ে লেশমাত্র ক্ষতদাগ খুঁজে পাওয়ার জো নেই। তবে কি এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন?
তেমনটা মনে করছেন না ঐতিহাসিকদের একাংশ। কারণ, গতবছর ঠিক একইভাবে ধুলো উড়তে দেখা গিয়েছিল আসমানগড় প্রাসাদ থেকেও। পাওয়া গিয়েছিল পাথর ভাঙার শব্দ। আসলে প্রাসাদের বাইরের অংশ অক্ষত রেখে, লোকচক্ষুর আড়ালে ভেতর থেকেই ভেঙে ফেলা হয়েছিল বড়ো বড়ো থাম ও দেওয়াল। যখন প্রশাসনের নজরে আসে বিষয়টি তখন অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে। এই একই ঘটনা ঘটতে চলেছে কিং কোঠি প্রাসাদের সঙ্গেও। এমনই সন্দেহ বিশেষজ্ঞদের।
২০১১ সাল থেকে এই প্রাসাদ পাখির চোখ নীহারিকা ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও আইরিস হাসপাতালের। সেইসময় থেকেই নিজাম ট্রাস্টের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনায় বসেছে এই দুই সংস্থার কর্মকর্তারা। এমনকি মালিকানা নিয়ে দুই সংস্থার মধ্যে বিবাদও পৌঁছেছিল চরমে। বছর দুয়েক আগে বেশ কিছু দুষ্কৃতিদের দিয়ে মালিকানা দখলের চেষ্টাও করা হয়েছিল। অন্যদিকে এই প্রাচীন প্রাসাদটিকে বিক্রি করে দিতে যথেষ্ট ইচ্ছুক নিজাম ট্রাস্টও।
যদিও ঐতিহ্যবাহী ভবনের তালিকার অন্তর্গত হওয়ায়, এই প্রাসাদের বিক্রি সম্পূর্ণভাবেই অবৈধ। আর তা যদি করতেই হয়, তবে প্রশাসনের থেকে বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন পড়ে। সেই ধরনের কোনো আবেদনই হায়দ্রাবাদ প্রশাসনের কাছে জমা পড়েনি বলেই জানাচ্ছে, মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন। অন্যদিকে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে আশ্বাস দিয়েছেন ডেকান হেরিটেজ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মহম্মদ সফিউল্লাহ। ঐতিহাসিক এই প্রাসাদের পরিণতি কী হয়, এখন সেটাই দেখার…
Powered by Froala Editor