তারাকম চতুর্ভেদুলা। হায়দ্রাবাদের কল্যাণ নগরের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। শুধু এইটুকু বললে তাঁর ব্যাপারে কিছুই বলা হয় না যদিও। লকডাউনের মাঝে বাড়ির বাগানে হাজার স্কোয়্যার ফুট চত্বরজুড়ে তিনি ঘটিয়ে ফেলেছেন ছোটখাটো এক সবুজ বিপ্লব। ২০০টি উদ্ভিদ নিয়েই এখন তাঁর সংসার।
কী নেই তাঁর বাগানে? ভেষজ উদ্ভিদ থেকে শুরু করে নানান ধরণের ফলমূল, সবজি সবই সেখানে বেড়ে উঠছে কোনোরকম রাসায়নিক পরিচর্যা ছাড়াই, সম্পূর্ণ ঘরোয়া প্রক্রিয়ায়। অ্যালোভেরা, বেল, দর্ভ, পূণর্নভা প্রভৃতি মেডিসিনাল প্ল্যান্টস যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে বেগুন, টোম্যাটো, কুমড়ো, পেঁপে, পেয়ারা কিংবা ইজরায়েলি অরেঞ্জের মতো ফল এবং সবজিও। এ থেকেই বোঝা যায়, তাঁর বাগানের বিস্তৃতি এবং রকমারি চাষ কত ব্যাপক ও বিচিত্র।
তারাকম বলেন, ফলমূল এবং শাকসবজির জন্যে বাজারে তাঁকে প্রায় যেতে হয় না বললেই চলে। এমনকি, উপর্যুপরি ফসল প্রতিবেশীদের মধ্যেও বিলিয়ে দেন তিনি। আসলে, গাছ এবং বাগানের পরিচর্যার মধ্যে দিয়ে অনাবিল আনন্দ পান তিনি। যা তাঁকে ক্লান্ত করে না একটুও।
তবে, গাছ এবং বাগানের পরিচর্যার ক্ষেত্রে ঘরোয়া পদ্ধতিতেই আস্থা রাখেন তিনি। প্রাত্যহিক গার্হ্যস্থ বর্জ্য থেকে তৈরি করেন জৈব সার। পড়াশোনা করে জানবার চেষ্টা করেন, ঘরের অব্যবহৃত জিনিস দিয়ে কীভাবে করা যায় বাগানের গাছেদের পরিচর্যা।
এইসবকিছু কিন্তু সম্ভব হয়নি একদিনে। বারংবার ব্যর্থ হওয়ার পর এসেছে সফলতা। বেশি করে সার দিয়ে ফেলায় গাছ বাঁচেনি। জমির পি এইচ-এর ব্যাপারে পড়াশোনা করে নিয়েছেন তারপর। পরেরবার গাছ বেঁচেছে ঠিক। তারাকম শিক্ষক হিসেবে সবসময় বিশ্বাস করতেন, একজন ভালো ছাত্র ব্যর্থতাকে ভয় পায় না কখনো, বরং ভুল শুধরেই সঠিকের দিকে এগিয়ে যায়। শিক্ষক হিসেবে এই বিশ্বাস এখন ছাত্র হিসেবেও প্রতিফলিত হচ্ছে তাঁর মধ্যে।
তারাকমের বাড়ির জানলার কার্নিশে তাই সকালবেলার রোদ্দুর এসে পড়লে পাখিরা ডেকে ওঠে সমস্বরে। জেগে ওঠে অন্য এক বায়োডাইভার্সিটি। সবুজ সে-দুনিয়াটি এই দূষিত পৃথিবীরই বুকে একমুঠো প্রতিবাদ, ভেবে ভালো লাগে সকলেরই...
আরও পড়ুন
গাছ লাগালেই ‘সবুজ যোদ্ধা’-র শংসাপত্র, রাজ্যজুড়ে সবুজায়নের অভিনব উদ্যোগ
Powered by Froala Editor