২০১০ সালের কথা। সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট বিভাগে সদ্য চাকরিতে নিযুক্ত হয়েছেন তিনি। কুটাটপল্লী মিউনিসপ্যালিটির তরফ থেকে একটি চিঠি এসেছিল তাঁর কাছে। ব্রিজ নির্মাণের জন্য রাস্তার ধার থেকে কেটে ফেলতে হবে ১৬টি কৃষ্ণচূড়া গাছ। তবে প্রকাণ্ড এই মহীরুহদের কেটে ফেলতে মন চায়নি তাঁর। বরং, নিজ উদ্যোগেই গাছগুলিকে স্থানান্তরিত করার সিদ্ধন্ত নেন তিনি। স্থানীয়দের অনুমতি নিয়ে নিকটবর্তী এক রাস্তার ধারে পুনরায় রোপণ করেন গাছগুলিকে। ১৬টির মধ্যে ১৩টি গাছই বেঁচে আছে আজও।
উদয় কৃষ্ণ (Uday Krishna)। হায়দরাবাদের (Hyderabad) এই প্রযুক্তিবিদই বর্তমানে হয়ে উঠেছে সে-শহরের প্রবীণ বৃক্ষদের রক্ষাকর্তা। আজ পর্যন্ত সবমিলিয়ে সহস্রাধিক গাছ ট্রান্সলোকেশন (Tree Translocation) বা স্থানান্তর করেছেন উদয়। তৈরি করেছেন এক নতুন নজির।
উদয়ের কর্মজীবন শুরু হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ২০০০ সালে দেশে ফেরার পর বেশ কিছুদিন তিনি কাজ করেছেন সামরিক ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে। তারপর ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রযুক্তিবিদ হিসাবে তিনি কাজ শুরু করেন হায়দরাবাদে। সরকারি প্রকল্পের জন্য নির্বিচারের গাছ কাটার প্রথার বিষয়টি তখনই দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাঁর। প্রাথমিকভাবে সরকারের বরাদ্দ করা গাছ কাটার অর্থ এবং নিজের সঞ্চয় ভেঙেই গাছ স্থানান্তর করতেন উদয়। পরবর্তী ২০১৫ সালে গড়ে তোলেন আস্ত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। হায়দরাবাদ তো বটেই তেলেঙ্গানার বিভিন্ন অঞ্চলে গাছ স্থানান্তরের দায়িত্ব তুলে নিয়েছে ‘ভাটা ফাউন্ডেশন’-খ্যাত এই সংস্থাই।
তবে গাছ ট্রান্সলোকেশনের বিষয়টি শুনতে সহজ হলেও, আদতে তেমন নয়। সাধারণত, একটি বড়ো গাছকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়ে রোপণ করতে সময় লাগে প্রায় ২০ দিন। তবে মাত্র ২-৩ দিনের মধ্যেই গাছ কেটে ফেলার নির্দেশ আসে সরকারি প্রকল্পের ক্ষেত্রে। তাছাড়া ট্রান্সলোকেশনের জন্য বিশেষ ধরনের গাড়ির বন্দোবস্ত করতে হয়। তবে সেসব ছাড়াই মাত্র ২ দিনের মধ্যে গাছ স্থানান্তর করে নজির গড়েছেন উদয়। তাঁর কৃতিত্ব সেখানেই। নিজের বুদ্ধি খাটিয়েই তিনি খুঁজে বার করেছেন অভিনব পন্থা।
গাছ স্থানান্তরের আগে প্রকাণ্ড মহীরুহের ডালপালা ছেঁটে ফেলেন উদয়। তারপর গাছের চারিদিকে খোঁড়া হয় ৪ ফুট ব্যাস ও গভীরতার গর্ত। গাছের শিকড় ও অন্যান্য ক্ষতস্থানে প্রলেপ দেওয়া হয় ফাঙ্গাস-প্রতিরোধক পদার্থের। একদিন পর গাছের মূল কাণ্ডটিকে লরিতে করে স্থানান্তরিত করা হয় অন্যত্র।
এখনও পর্যন্ত তাঁর সংস্থা তেলেঙ্গানায় প্রায় আড়াই হাজার গাছ স্থানান্তরিত করেচেন। যাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ গাছের প্রাণ বেঁচেছে। তবে তাঁর বিশ্বাস উপযুক্ত প্রযুক্তি ও সরকারি সাহায্য পেলে ১০০ শতাংশ গাছের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। বর্তমানে সবমিলিয়ে তাঁর সংস্থায় কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৬০ জন। সেইসঙ্গে শহরের বহু মানুষ এগিয়ে এসেছেন আর্থিক সাহায্যের জন্য। সরকারি প্রকল্পের জন্য শহরাঞ্চলে একটিও গাছ যেন কাটা না পড়ে, সেই লক্ষ্যেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন হায়দরাবাদের প্রযুক্তিবিদ…
Powered by Froala Editor