রাস্তার ধারে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে তালগাছ। ক্লান্ত পথিক চাইলে তার ছায়াতেই জিরিয়ে নিতে পারেন খানিকক্ষণ। আসলে বাংলার গ্রামগঞ্জের চেহারাটাই তো ছিল এমন। কিন্তু উন্নয়নের কোপে হারিয়েছে সবই। আর এই উন্নয়নযজ্ঞেরই শিকার হতে চলেছে বাঁকুড়া জেলার সারেঙ্গা ব্লকের শতাধিক তালগাছ। ইতিমধ্যে তাদের গায়ে সাদা দাগ দিয়ে গিয়েছেন প্রশাসনিক কর্মীরা। আর কিছুদিনের মধ্যেই গাছ কাটার কাজ শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন গ্রামবাসীরা। গাছ বাঁচাতে আন্দোলনের পথই বেছে নিয়েছেন তাঁরা।
সারেঙ্গা ব্লকের আমঝোর থেকে শুখাডালি পর্যন্ত ২ কিলোমিটার সড়কপথের দুধারে রয়েছে কয়েকশো শতাব্দীপ্রাচীন তালগাছ। তবে এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করে তোলার জন্যই রাস্তা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নিয়েছে প্রশাসন। আর সেই প্রকল্পের কারণেই কাটা পড়তে চলেছে গাছগুলি। গ্রামবাসীদের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদে সরব হয়েছে বেশ কয়েকটি পরিবেশ সংগঠনও। দাবিপত্র পেশ করা হয়েছে প্রশাসনিক কর্তাদের কাছেও। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, তাঁরা উন্নয়নের বিরোধী নন। রাস্তা সম্প্রসারণ হোক। কিন্তু তা যেন গাছ বাঁচিয়েই সম্পন্ন হয়। আর সেই ব্যবস্থা প্রশাসনকেই করতে হবে।
এই বিষয়ে প্রশাসনিক কর্তারা অবশ্য স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, গাছ বাঁচিয়ে কোনোভাবেই রাস্তা সম্প্রসারণ সম্ভব নয়। তবে যত সংখ্যক তালগাছ কাটা যাবে, তার ৫ গুণ গাছ লাগানো হবে রাস্তার দুধারে। প্রকল্পের মধ্যেই তার জন্য অর্থও বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের এই যুক্তি মানতে রাজি নন গ্রামবাসীরা। তাঁদের বক্তব্য, শতাব্দীপ্রাচীন এইসমস্ত গাছের ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব নয়। রাতারাতি গাছের বয়স বাড়িয়ে তোলা যাবে না। আর একটি পরিণত গাছ পরিবেশে যতটা ভূমিকা রাখতে পারে, চারাগাছের পক্ষে তা সম্ভব নয়। বরং আশেপাশে বেশ কিছু পরিত্যক্ত জমি পড়ে রয়েছে। সেইসমস্ত জায়গাকে কাজে লাগিয়েই রাস্তা সম্প্রসারণের ব্যবস্থা করা হোক। যদিও গ্রামবাসীদের কথায় এখনও কর্ণপাত করেননি প্রশাসনিক কর্তারা। শেষ পর্যন্ত কি তাঁরা আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করতে পারবেন? এর উত্তর সময়ই দেবে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
উপড়ানো গাছ পুনর্বাসনের জন্য ‘কাঁধে’ তুলে নিলেন গ্রামবাসীরাই!