বিশ্বকাপ-আয়োজনে জড়িত হাজার হাজার শ্রমিক এখনও জেলবন্দি কাতারে, কেন?

২০১১ সালে যখন কাতারে (Qatar) বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু হয়, সে-সময় কাতার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, বিশ্বকাপের বাজেট ৬.৫ বিলিয়ন ডলার। তবে সবমিলিয়ে ২২০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগে শেষ পর্যন্ত আয়োজিত হচ্ছে কাতার বিশ্বকাপ! শুধুমাত্র বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখেই তৈরি হয়েছে ঝাঁ চকচকে ৮টি স্টেডিয়াম। অজস্র হোটেল, রাজপথ কিংবা ভাস্কর্য। আর এই পরিকাঠামো গড়ে তুলতে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকদের (Migrant Workers) দেশে নিয়ে এসেছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। অথচ, বিশ্বকাপ শুরুর মুহূর্তেও কারাগারে বন্দি তাঁদের একাংশ। 

সম্প্রতি এমনই আশ্চর্য ও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে। না, নিছক কোনো প্রতিবেদন নয়। কাতারে একদল নেপালি পরিযায়ী শ্রমিকদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতেই লেখা হয় এই প্রতিবেদন। তাঁদের কথাতেই বার বার উঠে আসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রসঙ্গ। উঠে আসে অমানবিক শোষণের গল্প। 

যেখানে নেপালে দৈনিক শ্রমিকদের ন্যূনতম মাসমাইনে ৭৪ ডলার, সেখানে কাতারে তাঁদের মাসপিছু মাইনে ছিল ৭০০ ডলার। অর্থাৎ বলতে গেলে টাকার লোভ দেখিয়েই তাঁদের কাতারে নিয়ে আসা হয়েছিল, এমনটাই অভিযোগ তাঁদের। তবে আদতে কাজের ভিত্তিতে এই ৭০০ ডলার ছিল নিতান্ত সামান্যই। তার কারণ, প্রখর রোদে ধুধু মরুভূমিতেই কাজ করতে হয়েছে তাঁদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কখনও কাঁধে করে পাথর বয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে ৭-৮ তলা বাড়ির ওপর, কখনও আবার মরুভূমির মধ্যে খুঁড়তে হয়েছে সুড়ঙ্গ। 

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে এই অমানবিক পরিশ্রমের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালে, আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কর্মসময়ের পরিমাণ। দিনে ১০-১২ ঘণ্টা কাজ করাও একপ্রকার দৈনিক রুটিন হয়ে গিয়েছিল তাঁদের কাছে। অলিখিত এই ‘আইন’ অমান্য করলেই মাইনে কমিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হত অহরহ। যা কিনা কাতারেরই শ্রমিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এমনকি এও জানা যাচ্ছে, প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও এখনও বহু শ্রমিকই পাননি তাঁদের যোগ্য মজুরি। কাজের সময় হাত-পা ভাঙলেও, দেওয়া হয়নি চিকিৎসার খরচ। 

সদ্য-জেল থেকে মুক্তি পাওয়া এক নেপালি শ্রমিকের অভিযোগ, কারাগারে তাঁদের খাবার ও শয্যা প্রদান করা হলেও, তা ছিল চরম অস্বাস্থ্যকর। একই জেলখানায় প্রায় দেড়শো থেকে দুশো জন শ্রমিককে থাকতে হয়েছে কষ্ট করে। এবং সবচেয়ে মজার বিষয় হল, গ্রেপ্তারের সময় কোনো কারণই দেখানো হয়নি তাঁদের। বহু মানুষ ছাড়া পেলেও এখনও কাতারের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি রয়েছে সহস্রাধিক পরিযায়ী শ্রমিক। 

এর আগেই শ্রমিকদের মানবাধিকার নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছিল কাতারে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী সে-দেশে মৃত্যু হয়েছে সাড়ে ছ হাজার পরিযায়ী শ্রমিকের। তবে এ-কথা মানতে নারাজ কাতার কর্তৃপক্ষ। তাঁদের সরকারি নথিতে সংখ্যাটা ৩০-এর ঘরে! এবার এই অমানবিকতার আরও একটি আঙ্গিক ফুটে উঠল বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক প্রাক-মুহূর্তে। দেখালো ঝলমলে আলোর নিচে কীভাবে ঢেকে রাখা হয়েছে শ্রমজীবীদের কান্না… 

তথ্যসূত্রঃ
‘Our dreams never came true.’ These men helped build Qatar’s World Cup, now they are struggling to survive, By Aimee Lewis, Pramod Acharya and Sugam Pokharel, CNN

Powered by Froala Editor

Latest News See More