খাঁচার ভেতরে সার সার মানুষ, ৬০ বছর আগেও রমরমিয়ে চলত মানুষের চিড়িয়াখানা

চিড়িয়াখানায় গিয়ে বিভিন্ন পাখি, জীবজন্তু দেখারই অভ্যেস আমাদের। ধরা যাক, এমন কোনও চিড়িয়াখানা হল, যেখানে খাঁচার ভেতর পশু নয়, আছে মানুষ! হ্যাঁ, জলজ্যান্ত রক্তমাংসের মানুষ। অবাস্তব লাগছে হয়তো। কিন্তু একটা সময় কিছু জায়গায় সত্যিই ছিল মানুষের চিড়িয়াখানা, বা ‘হিউম্যান জু’। যেখানে রীতিমত টিকিট কেটে খাঁচার ওপারের মানুষদের ‘দেখতে আসত’ আরও কিছু মানুষ।

বহু বছর ধরেই, পৃথিবীর নানা দেশে প্রদর্শিত হত এই মানুষের চিড়িয়াখানা। বিংশ শতকের গোড়া থেকেই ইউরোপের নানা জায়গায় চালু ছিল এমন আয়োজন। খাঁচার ওপারে যারা থাকতেন, তাঁরা ছিলেন মূলত আদিবাসী সম্প্রদায়, এবং আফ্রিকার কালো চামড়ার মানুষ। খাঁচাতেই কাটত তাঁদের জীবন, তাঁদের দৈনন্দিন কাজ। স্ত্রী পুরুষ, বৃদ্ধ তরুণ নির্বিশেষে প্রত্যেককে ‘প্রদর্শনের’ জন্য রাখা হত। এমনকি, ছাড় পেত না শিশুরাও।

রাজা-রাজড়া থেকে উচ্চবিত্ত, প্রত্যেকের কাছেই আমোদের বিষয় ছিল এই চিড়িয়াখানা। আফ্রিকার কালো মানুষগুলো যেন ভিন গ্রহের কোনও এক জীব! এমন মনোভাব নিয়েই তারা দেখতে যেত এঁদের। ১৮৯৭ সালে কিং লিওপল্ড টু বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে এইরকমই একটি মানব চিড়িয়াখানা শুরু করেন। যেখানে ‘প্রদর্শনের’ জন্য ২৬৭ জন কঙ্গোর বাসিন্দাকে নিয়ে আসা হয়। ব্রাসেলসের ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে সেই চিড়িয়াখানাতেই মারা যান সাতজন। এরপরও অবশ্য বন্ধ হয়নি এই চিড়িয়াখানা। আস্তে আস্তে ব্রাসেলস থেকে লন্ডন, প্যারিস, অসলোর মতো শহরে শুরু হয় এটি।

১৯৫৮ সালে, ওয়ার্ল্ড ফেয়ারের সময় বেলজিয়ামে চলেছিল এই চিড়িয়াখানা। ফিলিপিন্স, কঙ্গো-সহ বিভিন্ন দেশের বাসিন্দাদের এখানে রাখা হয়। এবারও, নেহাত আমোদের জন্য এঁদের দেখতে আসত আপামর মানুষ। ’৫৮ সালের পর এই মানুষের চিড়িয়াখানা অবশ্য আর দেখা যায়নি। কিন্তু এত বছর ধরে চলা একটা ঘৃণ্য প্রথার স্মৃতি এখনও রয়ে গেছে। রয়ে গেছে চিড়িয়াখানার ভেতরে থাকা মানুষগুলোর এখনকার প্রজন্মের মধ্যে। নিছক বিনোদনের জন্য একটা অংশকে ব্যবহার করা, এটা কি কখনও ক্ষমার যোগ্য?

সেই সঙ্গে উঠে আসে বর্তমান সময়ের কথাও। মানব চিড়িয়াখানা হয়ত নেই, কিন্তু আমরা আজও আমোদ পেতে ভালবাসি। তথাকথিত সমাজে খাপ না খাওয়া মানুষগুলোকে অত্যাচার করে সেই আমোদ নিই আমরা। চিড়িয়াখানা হয়ত নেই, কিন্তু সেই মানসিকতা থেকে মুক্তি কি পেয়েছি? প্রশ্ন থেকেই যায়।

Latest News See More