এবার দেখতে পাবেন দৃষ্টিহীনরাও! পথ দেখাচ্ছে প্রযুক্তি

পৃথিবীতে জন্মগতভাবে অন্ধত্বের শিকার প্রায় ৪ কোটিরও বেশি মানুষ। তাছাড়াও কোনো না কোনো দৃষ্টিজনিত সমস্যা রয়েছে বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মানুষের। এবার দৃষ্টিহীনতার স্থায়ী সমাধান খুঁজে দিল প্রযুক্তি। অস্ট্রেলিয়ান বিজ্ঞানীরা তৈরি করে ফেললেন অত্যাধুনিক কৃত্রিম চক্ষু তথা বায়োনিক আই (Bionic Eye)। সম্প্রতি মানুষের ওপর শুরু হয়েছে এই যন্ত্রের ক্লিনিকাল ট্রায়ালও (Clinical Trial)। 

বায়োনিক আই বা কৃত্রিম চক্ষু মূলত একটি হেডগিয়ার। অনেকটা চশমার মতোই। তবে চশমার সঙ্গে সেখানে রয়েছে অত্যাধুনিক ক্যামেরা এবং ওয়্যারলেস ট্রান্সমিটার। চোখের রেটিনায় আলোক সংবেদনশীল কোষের উপস্থিতি, আলোকে বৈদ্যুতিক তরঙ্গে রূপান্তরিত করে। সেই তরঙ্গ বা বার্তা স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে যাওয়ার পরেই, মানুষের চিন্তায় ফুটে ওঠে কোনো বস্তুর ছবি। সংশ্লিষ্ট যন্ত্রের ওয়্যারলেস ট্রান্সমিটারটি কাজ করবে অনেকটা সেভাবেই। ক্যামেরায় তোলা ছবি বৈদ্যুতিক তরঙ্গের আকারে সরাসরি স্নায়ুতে পাঠাবে যন্ত্রটি। অবশ্য তার জন্য চোখের মধ্যে প্রতিস্থাপিত করতে হবে ছোট্ট একটি রিসিভার চিপ। 

অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ও নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের যৌথ প্রচেষ্টাই রূপায়ন সম্ভব হয়েছে এই যন্ত্রের। জড়িত ছিলেন মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তিবিদরাও। বছর দেড়েক আগেই তাঁদের এই গবেষণাকে স্বীকৃতি জানিয়েছিল বিশ্বের অন্যতম বিজ্ঞান পত্রিকা ‘নেচার’। তবে যন্ত্রের কার্যপ্রণালী এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে বেশ কিছু সন্দেহ থেকেই গিয়েছিল বিজ্ঞানীমহলে। এবার সেইসব সংশয়কে নস্যাৎ করে, যন্ত্রটির ব্যবহার বাস্তবায়িত করে দেখালেন অস্ট্রেলিয়ার গবেষকরা।

গত বছরের শেষের দিকেই শুরু হয়েছিল অভিনব এই যন্ত্রের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। প্রাথমিকভাবে ভেড়ার ওপর পরীক্ষানিরীক্ষা চলেছিল ‘ফিনিক্স ৯৯’-খ্যাত এই যন্ত্রটির। তিন মাসের সেই ট্রায়ালের ফলাফল যথেষ্ট আশাজনক। সম্মীক্ষায় উঠে আসছে ৯০ শতাংশের বেশি ক্ষেত্রেই সাফল্য পেয়েছে অস্ট্রেলীয় গবেষকদের তৈরি এই বায়োনিক চক্ষু। পাশাপাশি চক্ষু-সংলগ্ন কলা ও স্নায়ুতন্ত্রের ওপর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও লক্ষ করেননি গবেষকরা। কাজেই, বলা যেতে পারে এই যন্ত্র অনেকটাই নিরাপদ। পাশাপাশি এই যন্ত্র নির্ঞ্ঝাটভাবেই কাজ করতে পারে আজীবন। 

আরও পড়ুন
বিনিয়োগ শূন্য, পুরনো জুতোর জন্য আবেদন দৃষ্টিহীন অ্যাথলিটদের

পূর্ব-সমীক্ষার ফলাফলের ওপর নির্ভর করেই সম্প্রতি মানুষের ওপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করেছেন অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা। এই ট্রায়ালের সামগ্রিক ফলাফল আসতে সময় লাগবে কয়েক বছর। কাজেই সংশয় নেই, আর কয়েক বছরের মধ্যেই অন্ধত্বের প্রতিকার চলে আসবে মানুষের হাতে। তবে দৃষ্টিক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকছেন না গবেষকরা। আগামীদিনে এই প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করেই শ্রবণ বা বাকশক্তিহীনতা সমাধানেরও চেষ্টা চলবে বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা… 

আরও পড়ুন
দৃষ্টিহীন তরুণীর ক্যামেরাতেই ধরা পড়ছে শহরের দৈনন্দিনতা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
দৃষ্টিশক্তি ফেরাল জিন টেকনোলজি, বড়ো সাফল্য গবেষকদের

More From Author See More