আগামী দশকেই মঙ্গলে পা রাখতে চলেছে মানুষ, তৈরি হতে পারে মহাজাগতিক উপনিবেশ

সেই কোন কাল থেকে মানুষের রাত কেটেছে আকাশের দিকে তাকিয়ে। আর সেই আকাশে হাজার তারার মাঝে খানিকটা লাল প্রভা নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে যে তারা, সেটা যে আসলে একটা গ্রহ তা জানা গিয়েছে অনেক পড়ে। সবসময় অবশ্য তাকে দেখা যায় না। গ্রহের তো নিজস্ব কোনো আলো নেই। সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে ফিরে এলে তাকে দেখা যায়। আমাদের পৃথিবীর ঠিক পরের গ্রহ মঙ্গল। আর তার ভূপৃষ্ঠ লাল। এই লাল গ্রহকে ঘিরে মানুষের প্রশ্নের কিন্তু শেষ ছিল না। বিশেষ করে ১৮ শতকের শেষে যখন টেলিস্কোপে দেখা গেল মঙ্গল গ্রহের উপরে আছে বেশ কিছু স্থাপত্যের নিদর্শন, সেদিন থেকেই সন্দেহ ছিল হয়তো সেখানে আছে কোনো উন্নত প্রাণীর অস্তিত্ব।

অবশ্য আজ আমরা জানি, মঙ্গলগ্রহে কোনো উন্নত সভ্যতার অস্তিত্ব নেই। এই সৌরজগতের কোথাও নেই। কিন্তু পাশাপাশি বিজ্ঞানীরা একথাও বলেন, আজ থেকে ৩.৫ মিলিয়ন বছর আগে মঙ্গলগ্রহ এখনকার মতো শুষ্ক ছিল না। সেখানে ছিল সমুদ্র, নদী, বদ্বীপ সবই। পৃথিবী থেকে সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব কোনো অংশে কম ছিল না। এমনকি এখনও যে কোনো অণুজীবের অস্তিত্ব নেই তার কোনো প্রমাণ নেই। কিন্তু এসব জানতে গেলে প্রয়োজন দীর্ঘ গবেষণা। আর তাই মহাকাশ গবেষণার ইতিহাস যতটা পুরনো, ঠিক ততটাই পুরনো মঙ্গলগ্রহকে নিয়ে জানার চেষ্টা।

১৯৬০-এর দশকের আগে মহাকাশ অভিযানের কোনো ইতিহাসই ছিল না। কিন্তু প্রথম সফল মহাকাশ অভিযানের পর থেকেই শুরু হয় মঙ্গলগ্রহে পা রাখার চেষ্টা। আর এই প্রচেষ্টায় চিন, রাশিয়া, আমেরিকার সঙ্গে পা মিলিয়েছে ভারতও। কিন্তু এই কয়েক দশকে একের পর এক প্রচেষ্টার পরেও মাত্র ৮টি অভিযান সফল হয়। আর তাও কেবল ফ্লাই-বি এবং স্যাটেলাইট। মানুষ পাঠানোর মতো ঝুঁকি নিতে পারেননি কেউই।

আমাদের পাশের গ্রহ মঙ্গল, অথচ তার সম্বন্ধে এখনও জানি না কিছুই। তবে এটুকু জানি এখনও নিয়মিত ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে মঙ্গল। আর আয়তনে পৃথিবীর অর্ধেকের থেকে সামান্য বড়ো এই গ্রহটির আবর্তন গতি পৃথিবীর প্রায় সমান হলেও পরিক্রমণ গতি পৃথিবীর প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু আশার কথা, এবার হয়তো মঙ্গলগ্রহ সম্বন্ধে অনেক অজানা তথ্যই জানা যাবে। কারণ ২০৩০ সালের মধ্যেই মঙ্গলে পা রাখতে চলেছে প্রথম মানুষ। কিন্তু তার আগেও তো ভিত্তি পরীক্ষা করা প্রয়োজন। আর তাই আবার শুরু হয়েছে একের পর এক অভিযান।

আরও পড়ুন
প্রাণের সমস্ত সম্ভাবনাই রয়েছে এই দুই গ্রহে, নয়া আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের

২০ জুলাই আরব দেশ থেকে স্যাটেলাইট পাড়ি দিয়েছে মঙ্গল গ্রহের উদ্দেশ্যে। আর ২৩ জুলাই চিন এবং ৩০ জুলাই আমেরিকা স্পেস রোভার পাঠিয়েছে লাল গ্রহে। হয়তো তিনটি অভিযান একসঙ্গে সফল হবে না। কিন্তু প্রতি ২৬ মাস অন্তর পৃথিবী থেকে মঙ্গল অভিযানের উপযুক্ত সময় এসে পড়ে। আর ২০৩০ সালকে পাখির চোখ করে এগোতে চাইছে প্রতিটা মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রই। আর তার কারণ, এবার হয়তো দূষিত পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে মানুষকে। আর ভিনগ্রহে যদি বসবাস করতেই হয়, তবে মঙ্গলের থেকে ভালো জায়গা আর কী হতে পারে?

আরও পড়ুন
অবশেষে উদঘাটিত হতে চলেছে বৃহস্পতি গ্রহে ঝড়ের রহস্য

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
পৃথিবীর মতো আরও একটি গ্রহের সন্ধান পেল নাসা, থাকতে পারে জলও

Latest News See More