‘হিউম্যান কম্পিউটার’, বই লিখেছেন সমকামী সম্পর্ক নিয়েও; শকুন্তলা দেবীর জীবন এবার পর্দায়

সালটা ১৯৭৭। সাউথার্ন মেথোডিস্ট ইউনিভার্সিটির প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত এক বিস্ময়কর মহিলা। নানা জটিল গাণিতিক সমস্যার উত্তর দিতে তাঁর সময় লাগে মাত্র কয়েক সেকেন্ড। কথায় কথায় তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল একটি ২০১ অঙ্কের সংখ্যার ২৩তম মূল। যেকোনো মানুষের পক্ষেই এই উত্তর দেওয়া অসম্ভব। কিন্তু উপস্থিত মহিলা যে শকুন্তলা দেবী। তাঁর মাত্র ৫০ সেকেন্ড সময় লাগল এই প্রশ্নের উত্তর দিতে। কিন্তু সেই উত্তর কি সঠিক? মানুষের পক্ষে তা যাচাই করাও অসম্ভব। তাই কম্পিউটারের স্মরণাপন্ন হতে হল। আমেরিকার ব্যুরো অফ স্ট্যান্ডার্ড থেকে জানানো হয়, উত্তর একেবারেই সঠিক।

বিজ্ঞান ও গণিতের জগতে অনেক আশ্চর্য প্রতিভার জন্ম দিয়েছে ভারতবর্ষ। কিন্তু সেখানে যেন শুধুই পুরুষের ছড়াছড়ি। এমনিতেই বিজ্ঞানের জগতে মেয়েদের অংশগ্রহণ বেশ হাতে গোনা। তবে সেখানেও যে কয়েকজন মহিলার নাম উঠে আসে, তার মধ্যে শকুন্তলা দেবীর নাম অবশ্যই প্রথম সারিতে থাকে। তিনি শুধুই একজন বিশেষজ্ঞ নন, গণিতের জগতে তিনি এক বিস্ময়। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জটিল গণনার কাজ করে ফেলতে পারতেন তিনি। আর তাই অনেকেই তাঁকে ডাকতেন 'হিউম্যান কম্পিউটার' নামে। অবশ্য এই নাম পছন্দ করেননি শকুন্তলা দেবী।

সাউথার্ন মেথোডিস্ট ইউনিভার্সিটির ঘটনার ঠিক তিন বছরের মাথায়, ১৯৮০ সালে তিনি উপস্থিত লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজে। সেখানে মাত্র ২৮ সেকেন্ডে দুটি ১৩ অঙ্কের সংখ্যা গুণ করে দেখালেন তিনি। বলা বাহুল্য, এবারেও সবাই অবাক হলেন। এরপর ইংল্যান্ডের বেতার সংস্থা বিবিসি কর্তৃক আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানের সূত্রে তাঁর খ্যাতি পৌঁছে গেল সারা পৃথিবীতে। কিন্তু এসবের মধ্যে কোথাও যেন তাঁকে যন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করা শুরু হয়। এই বিষয়টা শকুন্তলা দেবীর পছন্দ হত না। তিনি মনে করতেন মানুষের মস্তিষ্ক কম্পিউটারের থেকে অনেক বেশি জটিল। আর তাই তাকে যন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করা মানে আসলে অপমান করা।

তবে এই বিস্ময়কর শকুন্তলা দেবীর জীবন বয়ে গিয়েছে আরও বিচিত্র পথে। ১৯২৯ সালের ৪ নভেম্বর ব্যাঙ্গালোরের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে তাঁর জন্ম। মাত্র তিন বছর বয়স থেকেই অঙ্কের প্রতি তাঁর আগ্রহ সবাইকে অবাক করতে থাকে। আর ৬ বছর বয়সেই তাঁর বিস্ময়কর ক্ষমতার পরিচয় পেলেন মাইসোর ইউনিভার্সিটির শিক্ষকরা।

আরও পড়ুন
‘বুলবুল’-এর প্রসঙ্গে মনে পড়ে রঙের বাঙ্ময়তার কথাও

তবে ভারতে বেশিদিন থাকলেন না শকুন্তলা দেবী। ১৯৪৪ সালেই তাঁর বাবার সঙ্গে পাড়ি দিলেন লন্ডনের উদ্দেশ্যে। তারপর একের পর এক সভায় তাঁর ক্ষমতার পরিচয় দিলেন। তবে শুধুই গণিত নয়, শকুন্তলা দেবীর আগ্রহ ছিল জ্যোতিষ শাস্ত্র, রান্না প্রভৃতি নানা বিষয়ে। এইসব বিষয়ে বইও লিখেছেন তিনি। গণিতের বইয়ের পাশাপাশি এইসব বইও যথেষ্ট জনপ্রিয়। তবে এর মধ্যেই আছে আরও একটি বিচিত্র বই। বইয়ের নাম, 'দ্য ওয়ার্ল্ড অফ হোমোসেক্সুয়ালস'। আর এটাই ভারতে সমকামী সম্পর্ক নিয়ে লেখা প্রথম বই। যেখানে তিনি সোচ্চারে ঘোষণা করেছিলেন, সমস্ত পুরুষ এবং মহিলার মত সমকামীরাও সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষ। তাঁদেরও নিজের মতো করে বাঁচার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন শকুন্তলা দেবী। শুধু তাঁর স্মৃতি হয়ে থেকে গেল তাঁর লেখা বই এবং অসংখ্য অনুষ্ঠানের ফুটেজ।

আরও পড়ুন
সুশান্তের শেষ সিনেমা ‘দিল বেচারা’-র মুক্তিও অনলাইনে! বড়ো পর্দার দাবিতে সরব অনুরাগীরা

অবশ্য এসবের মধ্যেও কোথাও আড়ালে থেকে যায় শকুন্তলা দেবী এবং তাঁর কন্যা অনুপমার সম্পর্ক। আর এই প্রায় অজানা বিষয়কেই গুরুত্ব দিয়ে সম্প্রতি আসতে চলেছে অনু মেননের সিনেমা 'শকুন্তলা দেবী'। আর সেই সিনেমার চিত্রনাট্য রচনার কাজে অনু মেনন এবং নয়নিকা মহান্তির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছেন অনুপমা ব্যানার্জিও। বিদ্যা বালানকে দেখা যাবে শকুন্তলা দেবীর চরিত্রে। এবং অনুপমার চরিত্রে অভিনয় করেছেন সানিয়া মালহোত্রা। ৮ মে মুক্তির দিন স্থির থাকলেও লকডাউনের কারণে সেই দিন পিছিয়ে যায়। অবশেষে ৩১ জুলাই আমাজন প্রাইম ভিডিওতে প্রকাশিত হতে চলেছে এই সিনেমা। করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর বিস্ময়কর এই মানুষটির জীবনের আরও অনেক বিস্ময়কর ঘটনা সম্বন্ধে জানার অপেক্ষায় আছেন মানুষ।

আরও পড়ুন
অস্কারের জন্য মনোনীত প্রথম পাকিস্তানি সিনেমা, কাহিনিকার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
তপন সিংহ চিনেছিলেন খাঁটি রত্ন, যুবক ইরফানকে নিয়ে আজও মুগ্ধ সৌম্যেন্দু রায়

More From Author See More