প্রতিবেদনের শিরোনাম দেখে ঘাবড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। আর কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যদি এমন কথা শোনা যায় খোদ রাষ্ট্রপুঞ্জ-সচিবের মুখে? হ্যাঁ, সম্প্রতি এমনটাই জানালেন খোদ রাষ্ট্রপুঞ্জের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যান্টোনিও গুতেরেজ। গতকাল থেকেই জার্মানির বার্লিনে শুরু হয়েছে বিশেষ জলবায়ু সম্মেলন। অংশ নিয়েছে বিশ্বের ৪০টি দেশ। সেই সভাতেই দাঁড়িয়ে সতর্ক করলেন রাষ্ট্রপুঞ্জ-সচিব (Secretory General of UN)।
আক্ষরিক অর্থে আত্মহত্যা নয়, বরং মানুষের কর্মকাণ্ডই গোটা জাতিকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। গুতেরেজ জানাচ্ছেন, পৃথিবী এমন এক সংকট মুহূর্তে এসে দাঁড়িয়েছে যে এবার জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে প্রাণ যেতে শুরু করবে অসংখ্য মানুষের। হ্যাঁ, ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে সেই ভয়াবহ অধ্যায়। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় কিংবা দাবানল— আদিকাল থেকেই পৃথিবীর বুকে রাজত্ব করে এসেছে এইসব প্রাকৃতিক শক্তি। কিন্তু তাদের প্রাদুর্ভাব এতটাও প্রবল ছিল না কখনোই। একটা ধ্বংসযজ্ঞের পর নিজেকে সারিয়ে তোলার বেশ খানিকটা সময় পেত বিশ্ব। কিন্তু বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে হাতছাড়া হতে বসেছে সেই সুযোগ।
যে-সময় অ্যান্টোনিও গুতেরেজ বার্লিনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে এই বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, তখন ইউরোপের বহু দেশেই জ্বলছে দাবানলের লেলিহান শিখা। আগুনের গ্রাসে ছাই হয়ে যাচ্ছে পর্তুগাল, স্পেন, ফ্রান্স এবং গ্রিসের মতো পশ্চিমি দেশের হাজার হাজার একর অরণ্য। প্রাণ হারাচ্ছে কয়েক লক্ষ বন্যপ্রাণী। একই পরিস্থিতি আফ্রিকা কিংবা আমেরিকাতেও। ইংল্যান্ড, জার্মানির মতো শীতপ্রধান দেশও শিকার তাপদাহের। জুলাই মাসে তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মাত্রা। ভয়াবহভাবে গলছে সুইজারল্যান্ড, গ্রিনল্যান্ড এবং মেরু প্রদেশেরর বরফ।
সবমিলিয়ে শুধু পরিবেশই ক্ষতিগ্রস্ত না, মানব সভ্যতাতেও এই ঘটনা ভয়াবহভাবে প্রভাবিত করতে চলেছে। গত দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে খাদ্যাভাব চরমে পৌছেছে আফ্রিকায়। এবার এই দাবানলের জেরে আরও বিপন্য হবে সেখানকার মানুষের জীবন। অন্যদিকে দাবানলের প্রকোপে উল্টে এক ধাক্কায় বায়ুদূষণের মাত্রাও বাড়বে গোটা বিশ্বজুড়ে।
আরও পড়ুন
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, টাইগ্রিসের গর্ভ থেকে উঠে এল প্রাচীন নগরী
কিন্তু দাবানল, খরা কিংবা বন্যার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলা কি আদৌ সম্ভব? হ্যাঁ, তার কারণ যদি মানব সভ্যতা হয়, তবে নিশ্চয়ই তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সেই দিকটাতেই আলোকপাত করতে চাইছেন অ্যান্টোনিও গুতেরেজ। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে শুরু করে, অত্যধিক খনন, বৃক্ষচ্ছেদন, অনিয়ন্ত্রিত কার্বন নির্গমন, শিল্পজাত বর্জ্যের প্রক্রিয়াকরণের জন্য পর্যাপ্ত পরিকাঠামোর অভাব এবং অবহেলা— এসবই ক্রমশ রুক্ষ করে তুলছে প্রকৃতিকে। আর তার জেরেই ক্রমশ বাড়ছে প্রকৃতির তাণ্ডব। নষ্ট হচ্ছে ভারসাম্য। তবে এত কিছুর পরেও হুঁশ জাগছে না মানব সভ্যতার। রীতিমতো তথ্য পেশ করেই রাষ্ট্রপুঞ্জ-সবিচ জানান কপ-২৬ সম্মেলনে নানাধরনের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও, কথা রাখেনি অধিকাংশ দেশ। নেওয়া হয়নি কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ। সার্বিকভাবে দেখতে গেলে তা আত্মহত্যারই সমতুল। জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে এখনও যথেষ্ট সচেতন না হলে, তার মাশুল গুনতে হবে মানুষকে, সে ব্যাপারেই সতর্ক করছেন গুতেরেজ-সহ বিশ্বের সমস্ত পরিবেশবিদরাই…
আরও পড়ুন
ভারতে প্রতিবছর ৭ লক্ষ মৃত্যুর নেপথ্যে জলবায়ু, জানাচ্ছে সমীক্ষা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
জলবায়ু পরিবর্তনের জের, মুছে যাচ্ছে প্রাচীন গুহাচিত্র