একসময় আফ্রিকা থেকে শুরু হয়েছিল আধুনিক মানুষের জীবনযাত্রা। তারপর ধীরে ধীরে পৃথিবীর নানা দেশে ছড়িয়ে পড়েছেন তাঁরা। কিন্তু ঠিক কীভাবে একটি দেশ থেকে আরেকটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে আধুনিক মানুষের বসতি। এই প্রশ্নে এখনও বিতর্ক দেখা যায় ঐতিহাসিকদের মধ্যে। বিশেষ করে কীভাবে আমেরিকার ভূখণ্ডে মানুষের বসবাস শুরু হল, সেই প্রশ্ন আজও রহস্যে ঢাকা। তবে সম্প্রতি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারকে ঘিরে প্রায় নিশ্চিতভাবে আমেরিকায় মানুষের পা রাখার ইতিহাস বলতে পারছেন বিশেষজ্ঞরা। আর তা থেকে অনুমান করা যাচ্ছে, এশিয়া থেকেই আমেরিকার ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছিল আধুনিক মানুষ। আর সেই যাত্রাপথ ছিল সমুদ্র পেরিয়ে, অর্থাৎ নৌকোয় করে।
অনেকে মনে করতেন, একসময় এশিয়া এবং আমেরিকার মধ্যে ছিল একটি সংকীর্ণ স্থলভাগ। এই স্থলভাগের নাম বেরিঞ্জিয়া। মানুষ সেই পথ পায়ে হেঁটেই আমেরিকায় পৌঁছে গিয়েছিল। পরে শেষ তুষারযুগের সময় বেরিঞ্জিয়া সমুদ্রের নিচে প্রবেশ করে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রত্নতাত্ত্বিকদের অনুমান, পায়ে হেঁটে নয়, বরং সমুদ্র পেরিয়েই এশিয়া থেকে আমেরিকা পৌঁছেছিল মানুষ। আর প্রশান্ত মহাসাগরের উপর দিয়ে এই দীর্ঘ পথ পারি দিয়েছিল নৌকোয় চড়েই। সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চলে এমন বেশ কিছু প্রাচীন নৌকোর ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার হয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকরা জানাচ্ছেন, মোটামুটি ১৫ থেকে ১৬ হাজার আগে মানুষ আমেরিকায় প্রথম পা রাখে। আর বেরিঞ্জিয়া অঞ্চল সমুদ্রের নিচে প্রবেশ করে প্রায় একই সময়ে। প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে এ এক প্যারাডক্স। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় সেই প্যারাডক্সের ইতি ঘটতে চলেছে। দেখা গিয়েছে একেকটি নৌকোর বয়স মোটামুটি ১৫ হাজার বছর। অর্থাৎ ততদিনে বেরিঞ্জিয়া সমুদ্রের নিচে প্রবেশ করেছে। তাহলে কী, স্থলপথে নয়, বরং জলপথেই পাড়ি দিয়েছিলেন আধুনিক মানুষ। গবেষকরা অন্তত এই সম্ভাবনার উপরেই জোর দিচ্ছেন। আর গবেষকদের দাবি, এই অনুমান সত্যি না হলে জাপানি এবং আমেরিকান জনগোষ্ঠীর জিনগত সাদৃশ্য নেহাৎ কাকতালিয় বলেই ধরে নিতে হবে। কারণ এর থেকে প্রাচীন কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আমেরিকায় পাওয়া যায়নি। তবে আজ থেকে ১৫ হাজার বছর আগে মানুষের সমুদ্রযাত্রার ইতিহাস সত্যিই রোমাঞ্চকর।
Powered by Froala Editor