কার্বন নির্গমন করছে বিশ্বের ১০টি সংরক্ষিত অরণ্য, জানাল ইউনেস্কো

মাস কয়েক আগের কথা। চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল ব্রাজিলের মহাকাশ সংস্থা এবং ক্যালটেক-সহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা। বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো কার্বনের প্রাকৃতিক আধার আমাজন নাকি শোষণের থেকে বেশি মাত্রায় কার্বন নির্গমন করছে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা আরও বড়ো আশঙ্কার কথা শোনাল এবার। শুধু আমাজনই নয়, এই একই ঘটনার সাক্ষী বিশ্বের সবথেকে সংরক্ষিত দশটি অরণ্যও (Most Protected Forests)।

সম্প্রতি এমনই বিস্ময়কর তথ্য জানাল ইউনেস্কো (UNESCO)। মানুষের কার্যকলাপ এবং জলবায়ু পরিবর্তন ক্রমশ সংরক্ষিত অরণ্যকেই করে তুলছে নিট কার্বন নির্গমনকারী (Carbon Emitters)। উদ্বেগজনক এই ছবি উঠে এসেছে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটগুলিতেও।  

বিগত দুই দশক ধরে, বিশ্বের সবথেকে সুরক্ষিত ও সংরক্ষিত ১০টি অরণ্যের কার্বন নির্গম এবং শোষণের মাত্রার তথ্য রেকর্ড করেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের শাখা সংস্থাটি। যার মধ্যে রয়েছে রিও প্লাটানো বায়োস্ফিয়ার, সুমাত্রার ক্রান্তীয় অরণ্য, ইয়োসেমাইট পার্ক, কিনাবালু পার্ক, গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্ক রাশিয়ার আভস নুর বেসিনের মতো অরণ্য। সামগ্রিকভাবে যার আয়তন জার্মানির প্রায় দ্বিগুণ। বা, বলতে গেলে আমাজনের এক দশমাংশ মাত্র। আর সেইটুকু অঞ্চল থেকেই প্রতিবছর অপসারিত হচ্ছে ১৯ কোটি টন কার্বন। ফলে, স্বাভাবিকভাবেই জলবায়ু পরিবর্তনকে আটকানোর পরিবর্তে ত্বরান্বিত করছে এই ঘটনা।


আরও পড়ুন
হারাতে বসেছে কিশোরগঞ্জের রাংসা অরণ্য, উদাসীন প্রশাসন

গবেষকরা জানাচ্ছেন, মূলত তিনটি কারণে যেকোনো অরণ্য কার্বন নির্গমনকারী হয়ে ওঠে। আর সেগুলি হল— অবৈধ বৃক্ষচ্ছেদন, কৃষিকাজের সম্প্রসারণ এবং দাবানল। পাশাপাশি বৃক্ষচ্ছেদনের ফলে উৎপন্ন ‘বায়োমাস’ কয়েক বিলিয়ন টন কার্বন নির্গত করে প্রকৃতিতে। দেখতে গেলে সংরক্ষিত অরণ্যে কৃষিকাজ কিংবা বৃক্ষচ্ছেদনের প্রভাব অনেকটাই কম। কিন্তু অসংরক্ষিত অরণ্যে মানুষের এই ধরনের কার্যকলাপ ক্রমশ বদলে দিচ্ছে জলবায়ুকে। যার ফলে, দাবানলের শিকার হচ্ছে সংরক্ষিত অরণ্যগুলিও। কার্বন নির্গমনের মাত্রা বাড়ার পাশাপাশি একইভাবে বাড়ছে বিশ্বের উষ্ণতা। যা ত্বরান্বিত করছে পরবর্তী দাবানলকে। এভাবেই চক্রাকারে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে বিশ্বের সংরক্ষিত অরণ্যগুলি।

আরও পড়ুন
২৫০ বছর পর উপজাতিদের হাতে ফিরছে অরণ্যের অধিকার

তবে শুধু দাবানলই নয়, উষ্ণায়নের কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ এবং ভয়াবহতাও। সংরক্ষিত অরণ্যের আরও এক শক্তিশালী শত্রু হয়ে উঠেছে এই ধরনের বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ২০১৭ সালে ডোমিনিকার মরনে ট্রয়েস ন্যাশনাল পার্কের আনুমানিক ২০ শতাংশ অরণ্য ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল হারিকেন মারিয়ার প্রভাবে। 

আরও পড়ুন
জলের নিচেই বেড়ে উঠেছে যে-সমস্ত অরণ্য

এই হিসাব শুধুমাত্র বিশ্বের সংরক্ষিত অরণ্যের। অসংরক্ষিত বনভূমির ক্ষেত্রেও আরও বড়ো পরিসরে যে এই একই ছবি প্রতিফলিত হচ্ছে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। যা কার্বন নির্গমনের পাশাপাশি সংকটের ফেলছে জীববৈচিত্রকেও। আর এই পরিস্থিতিকে আটকানোর উপায়? একমাত্র বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনের নিয়ন্ত্রণই সার্বিকভাবে স্বাভাবিকের দিকে নিয়ে যেতে পারে এই ঘটনাকে। নাহলে উত্তরোত্তর এই ধ্বংসলীলা বাড়বে বলেই অভিমত বিজ্ঞানীদের…

Powered by Froala Editor