আলোর গতিপথ সরলরৈখিক। ছোটবেলা থেকে পাঠ্যপুস্তক এমনটাই শিখিয়ে এসেছে আমাদের। আজ থেকে দেড়শো বছর আগেও ঠিক এই ধারণাতেই বিশ্বাসী ছিল বিজ্ঞান। ১৯১১ সালে চিরাচরিত এই সমীকরণকেই বদলে দেন এই যুগের গ্রেটেস্ট মাইন্ড অ্যালবার্ট আইনস্টাইন। আইনস্টাইনই প্রথম ভবিষ্যদ্বাণী করেন, মহাকর্ষ বল আলোর গতিপথকে প্রভাবিত করতে পারে। সরলরেখায় না গিয়ে আলো বেঁকে যেতে পারে উপবৃত্তাকার পথে। আপেক্ষিকতাবাদের মাধ্যমে এই ‘গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং’-এর গাণিতিক প্রমাণও দিয়েছিলেন আইনস্টাইন। জানিয়েছিলেন, দূরবর্তী ছায়াপথ থেকে আলোকরশ্মি আসার সময় এই বিশেষ মহাজাতিক কারণে তৈরি হতে পারে জ্যোতির্বলয়।
আইনস্টাইন যে সময় এই ধারণার প্রবর্তন করেন, তখনও পর্যন্ত তৈরি হয়নি উন্নত মানের টেলিস্কোপ। সবটাই ছিল তাঁর অনুমান, গাণিতিক বিশ্লেষণ। তার প্রায় সাত দশক পর, ১৯৭৯ সালে বিজ্ঞানীরা প্রথম সেই তাত্ত্বিক বলয়ের দর্শন পেয়েছিলেন মহাকাশে। যা পরবর্তীতে নামকরণ করা হয় ‘আইনস্টাইন রিং’ হিসাবে। তারপর থেকে শতাধিক এই ধরনের বলয় নজর কেড়েছে বিজ্ঞানীদের। সম্প্রতি, হাবল স্পেস টেলিস্কোপে ধরা পড়ল দূরতম আইনস্টাইন রিং। যে আলোকবলয়ের জন্য দায়ী ছায়াপথমণ্ডলীর দূরত্ব পৃথিবী থেকে কয়েক বিলিয়ন আলোকবর্ষ। সাম্প্রতিক এই আবিষ্কার আরও একবার প্রমাণ করল, এক শতাব্দীরও বেশি বছর আগে নির্ভুল গণনা করেছিলেন আইনস্টাইন।
সদ্য-আবিষ্কৃত আইনস্টাইন রিংটির ছবি প্রকাশ্যে আনে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা। মূলত তিনটি ছায়াপথের যৌথ প্রভাবে সৃষ্টি হয়েছে এই জ্যোতির্বলয়টির। যার মধ্যে সবচেয়ে দূরবর্তী ছায়াপথের দূরত্ব প্রায় ১৫ বিলিয়ন আলোকবর্ষ। উজ্জ্বল ছায়াপথটির কেন্দ্রে রয়েছে একটি কৃষ্ণগহ্বরও। অন্য দুটি ছায়াপথের দূরত্ব পৃথিবী থেকে যথাক্রমে ৩ ও ৫ আলোকবর্ষ। মূলত এই দুটি ছায়াপথের মহাকর্ষীয় বলেই বিকৃত হয়েছে মধ্যবর্তী মহাশূন্য। যার ফলে দূরবর্তী নক্ষত্রটি থেকে উপবৃত্তাকার পথে ঘুরে আলোকরশ্মি পৌঁছাচ্ছে পৃথিবীতে। তৈরি হচ্ছে জ্যোতির্বলয়।
গাণিতিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী পৃথিবীর বাইরে আরও চারটি স্থান থেকেও দেখতে পাওয়া যাবে এই আশ্চর্যকর মহাজাগতিক ঘটনা। তবে শুধু আইনস্টাইনের তত্ত্বের প্রমাণই নয়, আগামীদিনে স্থান-কালের মহাজাগতিক মানচিত্র তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে এই আবিষ্কার। বুঝতে সাহায্য করবে মহাবিশ্বের আপেক্ষিক জ্যামিতি। এমনটাই অভিমত গবেষকদের।
আরও পড়ুন
ব্ল্যাকহোল থেকে আলোকরশ্মির নির্গমন! প্রমাণ মিলল আইনস্টাইনের তত্ত্বের
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
অলস মস্তিষ্কেই আপেক্ষিকতা তত্ত্ব আবিষ্কার আইনস্টাইনের, সুফল পেয়েছিলেন স্টিভ জোবসও!