‘জন্মিলে মরিতে হবে’। এ তো বিধির বিধান! যত সুখ, অসুখই থাক না কেন, মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু যদি এমন হয় যে, নিজের জন্মদিনের দিনই এগিয়ে এল মৃত্যুর প্রহর, তাহলে? জন্মদিন না হোক, তার কাছাকাছি একটি দিনেই যদি মৃত্যু হত! অনেকেরই হয়ত মনের সুপ্ত ইচ্ছাও সেটা। জানেন কি, বিজ্ঞান এবং মনস্তত্ত্বে এই ইচ্ছার একটা জমকালো নামও আছে? হ্যাঁ, কথা হচ্ছে ‘বার্থডে এফেক্ট’ বা ‘বার্থডে ব্লু’স’ নিয়ে।
আরও পড়ুন
নোবেলের কাছাকাছি গিয়েও ফিরতে হয়েছিল যে ১৪ জন বাঙালিকে
পৃথিবীতে ঘটা চমকপ্রদ জিনিসগুলোর মধ্যে বার্থডে ব্লু’স অন্যতম। একবার ভাবুন, নিজের জন্মের শুভ মুহূর্তেই মৃত্যু ঘনিয়ে এল। এই নিয়ে বেশ কিছু গবেষণা ও কেস স্টাডিও হয়েছে। এই অদ্ভুত ঘটনার সঙ্গে নিজের নাম যুক্ত করার জন্য অনেকে হঠকারী সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলে। ঘটে আত্মহত্যার মতো ঘটনাও। সমীক্ষা বলে, বিশেষ করে কমবয়সীদের মধ্যে এমন মানসিকতা দেখা যায়।
তবে এসব বাদ দিলেও, অনেক বিখ্যাত মানুষ আছেন, যাঁদের জন্ম আর মৃত্যুদিন একই। তাঁদের মধ্যে থেকেই পাঁচজনকে বেছে নিলাম আমরা-
আরও পড়ুন
চলতি বছরে, যেসব বিশিষ্ট বাঙালিকে হারালাম আমরা
রাফায়েল (চিত্রশিল্পী)
ইউরোপের নবজাগরণের ইতিহাসে যে ক’জন চিত্রশিল্পী কাজের মাধ্যমে নিজেদের ছাপ রেখেছিলেন, রাফায়েলের নাম একদম প্রথম সারিতে থাকবে। তাঁর বাবাও ছিলেন চিত্রশিল্পী। ১৪৮৩ সালের ৬ এপ্রিল (মতান্তরে ২৮ মার্চ) ইতালির আরবিনোতে জন্মগ্রহণ করেন রাফায়েল। ‘ম্যাডোনা’-র একাধিক ছবি, ‘দ্য হোলি ফ্যামিলি’, ‘ট্রান্সফিগারেশন’-সহ একাধিক উল্লেখযোগ্য ছবি আঁকেন। আজও, ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটারস ব্যাসিলিস্কা-সহ বিভিন্ন ইউরোপের নানা চার্চে, মিউজিয়ামে তাঁর আঁকা ছবি দেখতে ভিড় জমে। মাত্র ৩৭ বছর বয়সে, ১৫২০ সালের সেই ৬ এপ্রিলই মারা যান রাফায়েল। দিনটি ছিল গুড ফ্রাইডে।
উইলিয়াম শেক্সপিয়র
যতদিন সাহিত্য থাকবে, নাটক থাকবে, ততদিন শেক্সপিয়রও বেঁচে থাকবেন পৃথিবীতে। ১৫৬৪ সালের ২৩ এপ্রিল ইংল্যান্ডের ওয়ারউইকশায়ারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ‘হ্যামলেট’, ‘ওথেলো’, ‘জুলিয়াস সিজার’, ‘ম্যাকবেথ’, ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’- বিশ্ব সাহিত্য পেয়েছে একের পর এক কালজয়ী নাটক। পেয়েছে সনেটও। তাঁর সৃষ্টিই তাঁকে এনে দিয়েছে বিশ্বের সর্বকালের সেরা নাট্যকারের সম্মান। নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর কাজ, আজও তাঁর নাটক মঞ্চস্থ হলে ভিড় জমান দর্শকরা। নিজের শহরেই ১৬১৬ সালে, ৫২ বছর বয়সে মারা যান শেক্সপিয়র। আর দিনটা? ২৩ এপ্রিল!
বেগম রোকেয়া
শুধু বাংলা বা ভারতে নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় নারীদের লড়াইয়ের অন্যতম মুখ ছিলেন তিনি। বিবিসি’র ‘সর্বকালের সেরা বাঙালি’র তালিকায় একদম প্রথম দিকেই ছিলেন বেগম রোকেয়া। ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরে জন্মেছিলেন তিনি। বাঙালি মুসলিম মেয়েদের জন্য প্রথম স্কুল তৈরি করেছিলেন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত চেষ্টা করে গেছেন যাতে মেয়েরা পর্দার বাইরে বেরিয়ে আসে, সমাজের মুখ হয়ে ওঠে। পরবর্তীকালে, মুসলিম ওম্যান অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করেন। ১৯৩২-এর ৯ ডিসেম্বর ছিল তাঁর ৫২তম জন্মদিন। সেইদিনই হার্টের সমস্যায় মারা যান বেগম রোকেয়া।
বিধানচন্দ্র রায়
জন্ম ১৮৮২ সালের ১ জুলাই। শুধু বাংলা নয়, ভারতেরও ‘রত্ন’ ছিলেন ইনি। পশ্চিমবঙ্গের রূপকারও বলে থাকেন অনেকে। ১৯৪৮ সাল থেকে মৃত্যু অবধি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন বিধানচন্দ্র রায়। দুর্গাপুর, কল্যাণী, বিধাননগর অর্থাৎ আজকের সল্টলেক— এই জায়গাগুলি তৈরি করার পেছনে তাঁর অবদান স্বীকার করে ইতিহাস। এর পাশাপাশি, তিনি যে একজন ধন্বন্তরি ডাক্তার, সেটাও স্বীকার করেন মানুষ। এসব তো প্রায় কিংবদন্তির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে থাকাকালীনই, ১৯৬২ সালে নিজের জন্মদিনের দিনই মারা যান তিনি। এখন, ১ জুলাই ভারতের ‘ন্যাশনাল ডক্টরস ডে’ হিসেবে পালিত হয়।
ইনগ্রিড বার্গম্যান
বিখ্যাত পরিচালকের নামের সঙ্গে আংশিক মিল থাকলেও, ইনি একজন অভিনেত্রী। তবে ইনিও কিংবদন্তি। ১৯১৫ সালের ২৯ আগস্ট স্টকহোমে জন্মগ্রহণ করেন বার্গম্যান। তিনটে অস্কার, দুটো প্রাইমটাইম এমি অ্যাওয়ার্ড, গোল্ডেন গ্লোব, বাফটা, টনি অ্যাওয়ার্ড— অভিনয়ের জন্য কি পাননি তিনি! হলিউডের ক্লাসিক সিনেমার ইতিহাসের অন্যতম কিংবদন্তি অভিনেত্রী ছিলেন তিনি। ‘কাসাব্লাঙ্কা’, ‘জোয়ান অফ আর্ক’, ‘জার্নি টু ইতালি’, ‘আনাস্তাসিয়া’, ‘মার্ডার অন দ্য ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস’— একের পর এক ছবিতে দাপিয়ে অভিনয় করেছেন। কিন্তু জীবনযুদ্ধে হার মানলেন অবশেষে। ১৯৮২ সালে, ২৯ আগস্টেই মধ্যরাতে মারা যান বার্গম্যান। ব্রেস্ট ক্যানসার শেষ করে দিল মাত্র ৬৭ বছরের একটি জীবন।
Powered by Froala Editor