বিশ্বের প্রায় সব জায়গাতেই হানা দিয়েছে করোনা। কোথাও আক্রান্তের সংখ্যা লাখের অঙ্ক ছাড়িয়েছে, কোথাও আবার কয়েক হাজার। একইসঙ্গে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। কিন্তু সব জায়গাতেই কি একই ছবি? একদমই না। এরকমই একটি দেশের প্রসঙ্গে আসা যাক। প্রথম বিশ্বের দেশ বলা যাবে না কখনই। বরং তাঁদের সঙ্গেই লড়াই করে জেতার রাস্তা দেখিয়েছে এই দেশটি। এশিয়ার অন্যতম উন্নয়নশীল দেশ হয়েও করোনাকে আটকাতে পেরেছে ভিয়েতনাম। এখনও পর্যন্ত যেখানে একজন করোনা আক্রান্তও মারা যাননি।
প্রায় নয় কোটি মানুষকে নিয়ে বেড়ে উঠেছে এই দেশ। যাঁদের সংগ্রামের একটা ইতিহাস আছে। বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলির তুলনায় বেশ অনেকটাই পিছিয়ে ভিয়েতনাম। গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্তের সংখ্যা বেশি এখানে; স্বাস্থ্যব্যবস্থাও খুব একটা ভালো না। প্রতি দশ হাজার মানুষে ডাক্তারের সংখ্যা মাত্র আটজন! এদিকে চিন, কোরিয়া থেকে মানুষজন এখানে আসছে অহরহ। করোনা মহামারীর ‘আদর্শ পরিবেশ’ বলা যায়। কিন্তু বাস্তব কী বলছে? এখনও অবধি ভিয়েতনামে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ৩২৮ জন। যার মধ্যে ২৭৯ জন ইতিমধ্যেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এবং সবথেকে বড়ো কথা, করোনার জন্য একজন মানুষও মারা যায়নি এখানে!
এর পেছনে আছে সচেতনতা, পরিকল্পনা ও উপযুক্ত সময় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। একদম প্রথম কেসটি সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে ভিয়েতনাম প্রশাসন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আর চিনের মধ্যে যেখানে সংক্রমণ নিয়ে তরজা চলছে, সেখানে ভিয়েতনাম নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করছে। হু-এর জন্য অপেক্ষা করেননি প্রশাসনের কর্তারা। একেবারে মাঠে নেমে পরিস্থিতি বুঝেছেন; তারপর সেই তথ্য অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছেন। নাগরিকরা নিজেই সোশ্যাল ডিসটেনসিং বজায় রেখেছেন। জানুয়ারির গোড়া থেকেই টেম্পারেচার স্ক্রিনিং, আইসোলেশন ইত্যাদি শুরু হয়ে যায়। সেইসঙ্গে কাদের শরীর খারাপ হচ্ছে, কী হচ্ছে সেই সমস্তটা আপ-টু-ডেট করতে থাকেন। ২৩ জানুয়ারি প্রথম কেস সামনে আসার পরের দিনই আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়। সঙ্গে শুরু হয় লকডাউন।
ব্যস, এতেই কেল্লা ফতে! ভাবতে অবাকও লাগে, মাত্র ছয়জন করোনা আক্রান্তের খবর পেয়েই ন্যাশনাল এপিডেমিক ঘোষণা করে ভিয়েতনাম। অনেকেরই হাসি পেয়েছিল; কিন্তু এতসব পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে আজকের পরিস্থিতিটা কী, সেটা আমাদের চোখের সামনেই হাজির। অভূতপূর্ব তৎপরতার ফলাফল কী হতে পারে, দেখিয়ে দিল ভিয়েতনাম। আজ যেখানে বিশ্বের তাবড় তাবড় দেশ হিমশিম খাচ্ছে, আমেরিকা শ্মশান হয়ে গেছে প্রায়; সেখানে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে ভিয়েতনাম। বরং অন্যান্য দেশকে ত্রাণ সামগ্রী পাঠাচ্ছে তারা। ঠিক এভাবেই যদি অন্যান্য দেশে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হত, তাহলে করোনার থাবা এত মারাত্মক আকার নিত না। ‘তৃতীয় বিশ্বের দেশ’ হয়েও অসাধ্য সাধন করা যায়, ভিয়েতনাম সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে বারবার।
Powered by Froala Editor