যন্ত্রপ্রযুক্তির চূড়ান্ত সাফল্য কি গিলে খাবে মানুষের সভ্যতাকে? উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকেই এই প্রশ্ন তাড়া করে আসছে। আইজ্যাক অ্যাসিমোভের কলমে যেমন এসেছে সেই প্রশ্নের ভয়ানক উত্তর, আবার রবি ঠাকুরের নাটকে দেখেছি আশার আলো। সেই প্রশ্নকেই আবার উস্কে দিয়ে যায় 'টাইম' পত্রিকা। বছরের সেরা মানুষটি যখন আর মানুষ নয়।
১৯৮২ সালের 'টাইম' পত্রিকার বিশেষ সংখ্যাটা হাতে নিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন স্টিভ জোব। অবাক হয়ে দেখেছিলেন, পত্রিকার প্রচ্ছদে নেই তাঁর ছবি। তাঁর ভাষায়, সেদিন তিনি বুঝেছিলেন "কোনোকিছু নিয়েই চূড়ান্ত আশাবাদী হতে নেই।"
১৯২৭ সাল থেকে 'টাইম' পত্রিকা প্রতি বছরের শেষে প্রকাশ করত একটি বিশেষ সংখ্যা, 'ম্যান অফ দ্য ইয়ার'। সেই সংখ্যায় কার নাম প্রকাশিত হতে চলেছে, তাই নিয়ে জল্পনা চলে সবসময়ই। ১৯৮২ সালে সবাই ধরেই নিয়েছিলেন, স্টিভ জোবের নামই প্রকাশিত হতে চলেছে। বিগত কয়েক বছর ধরে প্রযুক্তিবিদ্যায় তাঁর কোম্পানি 'অ্যাপেল' যে সাফল্য দেখিয়ে এসেছে, তাতে এই সম্মান তাঁর প্রাপ্য বলেই ধরে নিয়েছিলেন সবাই। কিন্তু ডিসেম্বরের ২৬ তারিখে প্রকাশিত সংখ্যা অবাক করে দিয়েছিল সবাইকে।
১৯৮২ সালে বছরের সেরা মানুষটির নয়, বছরের সেরা মেশিনটির নাম প্রকাশ করল 'টাইম' পত্রিকা। আর সেই মেশিনের নাম 'পার্সোনাল কম্পিউটার'। ১৯৫৯ সালে সিলিকন আইসি তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কম্পিউটার নামের বিরাট যন্ত্রটির আয়তন ক্রমশ ছোট হতে থাকে। ১৯৭৪ সালে IBM এবং Apple, এই দুটি কোম্পানি একসাথে বাজারে নিয়ে আসে একটি হোম থিয়েটারের আয়তনের কম্পিউটার, যার নাম 'পার্সোনাল কম্পিউটার' বা পিসি। আর তাতেই প্রযুক্তিবিদ্যার জগতে যেন এক বিপ্লবের সূচনা হয়। পত্রিকার সম্পাদক রে কেভের কথায়, "একেকটা সময় আসে, যখন বছরের সবচেয়ে বেশি আলোচিত নামটা কোন ব্যক্তির নয়, একটি পদ্ধতির। …একটি পদ্ধতি যা সমস্ত পদ্ধতিকে পাল্টে দিতে পারে।"
১৯৮২ সালের ২৬শে ডিসেম্বর কম্পিউটারের আবিষ্কারক চার্লস ব্যাবেজের জন্মদিনে, 'টাইম' পত্রিকা শ্রদ্ধার্ঘ হিসাবে বছরের সেরা মানুষের সম্মান তুলে দেয় এই না-মানুষের হাতে।