মৃত্যুকে ঘিরে নানা চিরাচরিত প্রথা লক্ষ করা যায় পৃথিবীর সমস্ত দেশেই। আর সেই দেশটি যদি হয় দক্ষিণ আফ্রিকা, তাহলে বলতে হয় মৃত্যুই সেখানকার মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় উৎসব। উৎসব তো সবসময় আনন্দের নয়, একজন অতি প্রিয় মানুষকে হারিয়ে ফেলার মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে বিভিন্ন প্রথা মেনে চলেন সেখানকার মানুষ। কিন্তু এই অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার উপরেই সম্প্রতি এসে পড়েছে সরকারি পরোয়ানা। কারণটা আর কিছুই নয়, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। একটি মানুষের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য জড়ো হন শতাধিক মানুষ। আর তাঁদের সামাজিক রীতিনীতির ফলেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাস।
২১ মার্চ তারিখে কেপ শহরের কাছে মাজোলা গ্রামে একটি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য জড়ো হিয়েছিলেন বহু মানুষ। আর তার পরেই দেখা যায় রাতারাতি সেই অঞ্চলের ২০০ মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। পরপর আরও কিছু ঘটনায় এর পুনরাবৃত্তি দেখা যায়। আর এর পরেই নড়েচড়ে বসে সরকার। জরুরি পরিস্থিতিতে আইন করে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার উপর রাশ টানার উদ্যোগ নেয় সরকার।
ভাইরাসের সংক্রমণ আটকাতে সমস্ত ধরনের সামাজিক জমায়েত বন্ধ করেছে সরকার। তবে মৃত্যুর সঙ্গে যে জড়িয়ে আছে প্রিয়জনদের আবেগ। তাই এক্ষেত্রে খুব বেশি কঠোর হওয়া সম্ভব হয়নি। অনেকে অবশ্য বলেছিলেন সমস্ত মৃতদেহ সরাসরি মর্গ থেকে সমাধিস্থলে পৌঁছে দেওয়া উচিত। তবে শেষ পর্যন্ত সরকার নিয়ম করে, কোনোভাবেই ৫০ জনের বেশি মানুষ জমায়েত করতে পারবেন না। সেইসঙ্গে এও জানানো হয় যে মৃতের নিকট আত্মীয় ছাড়া কাউকেই মৃতদেহের কাছে যেতে দেওয়া হবে না, এবং জমায়েতের সময় প্রত্যেককে ন্যূনতম ১ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
সরকারের এই নির্দেশকে ঘিরে ইতিমধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে মানুষের মনে। প্রিয়জনের মৃত্যুর ঘটনাকে এভাবে তুচ্ছ করতে রাজি নন অনেকেই। সেইসঙ্গে বেশকিছু ধর্মীয় সংস্থা সরকারের এই সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়েছে। তবে করোনা ভাইরাসের মোকাবিলা করতে গেলে মানুষকে এবিষয়ে সচেতন হতেই হবে, মনে করছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার। আর এই আইনি ব্যবস্থার ফলে খানিকটা কাজ হয়েছে বলেও দেখা গিয়েছে রিপোর্টে। তবে জরুরি পরিস্থিতিতে এই ঘটনাকে স্বাগত জানালেও অনেকেই মনে করছেন এভাবে দীর্ঘদিনের সংস্কৃতিই হয়তো লোপ পেতে চলেছে। করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে মানুষের এই চিরাচরিত রীতিগুলি আদৌ স্থান পাবে কিনা, সেকথা ভবিষ্যতেই পরিষ্কার হবে। তবে আপাতত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার এই আপৎকালীন পদ্ধতি যদি দক্ষিণ আফ্রিকায় সংক্রমণের হার কমিয়ে আনতে সফল হয়, তাহলে সেটাই আশার কথা।