দীর্ঘ ৬ মাসের রাত্রি, অন্ধকার আকাশ আর প্রবল ঠান্ডা। এই পরিস্থিতিতেই প্রত্যেক বছর অ্যান্টার্কটিকায় পাড়ি জমাযন অসংখ্য বিজ্ঞানী। বরফে ঢাকা এই বিরাট মহাদেশের বুকে পৃথিবীর নানা দেশের তৈরি গবেষণাকেন্দ্র আছে। সেখান থেকে নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ, পরীক্ষাগারের দেখাশোনা, এবং আরও গবেষণার সূত্র খুঁজে পেতেই তাঁরা প্রতি বছর সেখানে যান, আর অন্ধকার আকাশের সৌন্দর্য নিরীক্ষণ করেন। এবারেও শুরু হয়ে গিয়েছে অভিযান। ইনগ্রিড ক্রিস্টেনসেন উপতটে ডেভিস স্টেশনে উপস্থিত হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ২৪ জন বিজ্ঞানী। আরও অনেকে এসেছেন বা কিছুদিনের মধ্যেই এসে পড়বেন। তবে এবারে খুব বেশি বিজ্ঞানী এখানে আসতে পারবেন না। কারণ এবারের পরিস্থিতি অন্যবারের মতো 'স্বাভাবিক' নয়। সারা পৃথিবীব্যাপী করোনা মহামারীর প্রকোপে রীতিমতো আতঙ্কের মধ্যে আছেন অ্যান্টার্কটিকার অভিযাত্রী বিজ্ঞানীরাও।
করোনা ভাইরাসের সম্পূর্ণ চরিত্র এখনও বিজ্ঞানীদের অজানা। মহাকাশের মধ্যে বাতাসের অনুপস্থিতিতেও তার সংক্রমণ অব্যাহত থাকছে। অথচ আশ্চর্যের বিষয়, আন্টার্কটিকা মহাদেশে এখনও থাবা বসাতে পারেনি এই ভাইরাস। ডেভিস স্টেশনের বিজ্ঞানীরা তাতে অনেকটাই আশ্বস্ত। এই বিরাট মহাদেশে প্রতি দলে মাত্র একজন ডাক্তার এবং সামান্য কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে আসতে হয় তাঁদের। এমন অবস্থায় ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটলে তার মোকাবিলা করার আর কোনো সুযোগই থাকবে না।
অস্ট্রেলিয়ার অভিযাত্রী দলের প্রধান ডেভিড নফ মনে করছেন, এবারে না হলেও আগামী গ্রীষ্মকালীন অভিযানের উপর নিশ্চই থাবা বসাবে করোনা ভাইরাস। অস্ট্রেলিয়া সরকারকে তাঁরা অনুরোধ করেছেন গ্রীষ্মকালীন অভিযানের সময়কাল পিছিয়ে দিতে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ না ঘটায় স্বস্তির চিহ্ন ফুটে উঠেছে প্রত্যেক অভিযাত্রীর মুখেচোখেই। তবে ভিডিও গেম খেলে আর রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করেই শুধু কাটিয়ে দিতে পারছেন না তাঁরা। সেইসঙ্গে একটা উৎকণ্ঠাও গ্রাস করেছে তাঁদের। অনেক দূরে মহামারীর মধ্যে দিন কাটাচ্ছে তাঁদের পরিবার। লকডাউনের জেরে ঘরের মধ্যে বন্দি প্রত্যেকেই। এমন পরিস্থিতিতে কেমন আছেন তাঁরা? জানার কোনো উপায় নেই বাস্তবত। তবে হয়তো আর কয়েক মাস পরেই ফিরে আসবেন তাঁরা। এসে দেখবেন সবকিছু ঠিক আগের মতোই আছে। আবার ততদিনে আন্টার্কটিকা মহাদেশেও করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে না, এমন কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি কেমন হতে পরে, ভাবতে গেলেই আতঙ্কে শিউরে উঠছেন প্রত্যেকে।