জাতীয় হকি দলের 'দায়িত্বে' ওড়িশা সরকার, জার্সিতেও উজ্জ্বল নাম

মীরাবাই চানু, পি ভি সিন্ধু-র পদকজয় বা লভলিনার বক্সিং সেমিফাইনালে ওঠার পরেই টোকিও অলিম্পিকে ভারতের জন্য সবচেয়ে বেশি আশার সঞ্চার করেছে দুই হকি দল। একদিকে মনপ্রীত সিং-এর বাহিনী সেমিফাইনালে পরাজিত হলেও এখনও ব্রোঞ্জ পদকের দাবিদার। অন্যদিকে রানি রামপালের নেতৃত্বে প্রথমবার অলিম্পিক সেমিফাইনালে ভারতের মহিলা হকি দল। খেলার মাঠে দুই দলের লড়াই তো অবাক করেছেই, তার চেয়েও অবাক করেছে তাদের জার্সি। হ্যাঁ, গাঢ় আকাশি রঙের জার্সিটাই। জাতীয় দলের এই জার্সিতে জ্বলজ্বল করছে দেশের একটি অঙ্গরাজ্যের নাম। ওড়িশা। কিন্তু কেন? উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে আরও ৩ বছর।

২০১৮ সাল। ভারতের জাতীয় হকি দলের স্পনসরশিপের জন্য নতুন করে নিলাম ডাকা হয়েছে। এতদিন জাতীয় ক্রিকেট দলের মতোই জাতীয় হকি দলেরও স্পনসর ছিল সাহারা গ্রুপ। কিন্তু এবার নিলামে তারা পিছিয়ে পড়ল। বার্ষিক ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের শর্তে দায়িত্ব পেল ওড়িশা সরকার। হ্যাঁ, একটি অঙ্গরাজ্যের নির্বাচিত সরকার। কোনো পুঁজিপতি বা কোনো কোম্পানি নয়। ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো জাতীয় দলের স্পনসরশিপ নিল একটি রাজ্যের সরকার। বীরেন্দ্র লাকরা বা দীপ গ্রেস এক্কার মতো খেলোয়াড়রা তো ওড়িশার ভূমিপুত্র। তাছাড়া হকির সঙ্গে ওড়িশার সম্পর্ক বরাবরই বেশ নিবিড়। একের পর এক কৃতী খেলোয়াড় উপহার দিয়েছে এই রাজ্যটি। ইতিমধ্যে ২০১৪ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি এবং ২০১৭ সালের ওয়ার্ল্ড লিগ ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছে ওড়িশাতেই।

প্রথমবার জাতীয় হকি দলের দায়িত্ব নিয়ে রাজ্যের ক্রীড়া ও যুব দপ্তরের মন্ত্রী বিনীল কৃষ্ণন জানিয়েছিলেন, দেশের হকি দলের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য। আর এই ৩ বছরের মেয়াদে সেই কাজ কতটা এগিয়েছে, তা টোকিও অলিম্পিকের স্কোরবোর্ডই প্রমাণ করে। বাণিজ্যিক লাভের জন্য নয়, খেলার প্রতি নিদারুণ ভালোবাসা থেকেই এক অন্য লড়াই শুরু করেছিল নবীন পট্টনায়েকের সরকার। যার সঙ্গে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিরও কোনো সম্পর্ক ছিল না। বড়ো বড়ো কোম্পানিদের বাণিজ্যিক নীতির সামনে তো ফুটবল বা ক্রিকেটের মতো জনপ্রিয় খেলাগুলি ছাড়া বাকি কোনো খেলাই গুরুত্ব পায় না। অলিম্পিকের ঠিক আগে হয়তো খানিকটা প্রস্তুতি শুরু হয়, কিন্তু দীর্ঘ অনুশীলন ছাড়া খেলার মাঠে সবটুকু দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না কোনো খেলোয়াড়ের পক্ষেই। অথচ একের পর এক খেলায় ভারতের খেলোয়াড়রা প্রমাণ করে চলেছেন, আপাতভাবে কম জনপ্রিয় খেলাগুলিতেও তাঁরা বিশ্বজয় করতে পারেন। শুধু প্রয়োজন একটু পরিকাঠামো। ওড়িশা সরকারের হাত ধরে সেই পরিকাঠামো পেয়েছে জাতীয় হকি দল। এর জন্য ভারত তো বটেই, সারা পৃথিবীর হকি জগৎ ওড়িশার কাছে কৃতজ্ঞ, এমনটাই জানিয়েছেন ভারতের জাতীয় হকি দলের প্রাক্তন ক্যাপ্টেন দিলীপ তিরকে। এভাবেই সরকারি ক্রীড়া বিভাগগুলি এগিয়ে এলে প্রতিটা খেলাতেই যে ভারত আরও এগিয়ে যেতে পারে, সে-কথা বলার অপেক্ষা থাকে না।

Powered by Froala Editor