মৃতদেহ পরিণত হবে সারে, পরিবেশ বাঁচাতে কম্পোস্টিং-ই ভরসা বিজ্ঞানীদের

ডিমের খোলা, শাক-সবজির অবশিষ্টাংশ কিংবা ফলের খোসা— আবর্জনা হিসাবে এসব আমরা ফেলে দিই, অথচ এইসকল উপাদান দিয়েই তৈরি হতে পারে জৈবসার। যা বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক তো বটেই, পাশাপাশি পরিবেশের কার্বন নির্গমন কমাতেও বিশেষভাবে কার্যকরী। জৈব আবর্জনার প্রক্রিয়াকরণের এই পদ্ধতিকেই বলা হয় কম্পোস্টিং। তবে শুধু আবর্জনাই নয়, প্রথাগত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বদলে এবার মানবদেহও কম্পোস্টিং করার পরামর্শ দিচ্ছেন গবেষকরা। 

হিউম্যান কম্পোস্টিং (Human Composting)— ২০১৯ সালে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে। এরপর অরেগন, কলোরাডো, ভার্মন্ট-সহ একাধিক প্রদেশেই শুরু হয় কম্পোস্টিং-এর প্রক্রিয়া। খোলে বিশেষ মানবদেহ প্রক্রিয়াকরণকেন্দ্র। তবে সাড়া মিলেছে সামান্য। বিগত ৩ বছরে মাত্র আড়াইশোটির মতো দেহ কম্পোস্টিং করা হয়েছে সেখানে। স্বেচ্ছায় দেহ কম্পোস্টিং করার জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত করেছেন আরও হাজার দুয়েক মানুষ। তবে পরিবেশের হাল ফেরাতে এই পদ্ধতিকে গণ-হারে ব্যবহার করতে হবে আগামীদিনে, এমন পরামর্শই দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। 

প্রশ্ন থেকে যায়, কীভাবে পরিবেশকে বাঁচাচ্ছে মানবদেহের এই প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর একটি বিশেষ সমীক্ষা চালিয়েছিলেন ওয়াশিংটন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। সেখানেই উঠে আসে আশ্চর্য তথ্য। প্রতিটি দেহ দাহ করার সময় খরচ করা হয় এলপিজি বা তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের একটি আস্ত সিলিন্ডার। কৃত্রিমভাবে চুল্লির মধ্যে তৈরি করা হয় ১৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ফারেনহাইট তাপমাত্রা। এর ফলে নির্গত হয় বিপুল পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড। পাশাপাশি দেহ দহনের পর সেই ছাই প্রকৃতিতে ছড়িয়ে বায়ুদূষণ ঘটায় প্রতিনিয়ত।

একই ঘটনা ঘটে দেহ সমাধিস্থ করার সময়ও। দেহ যাতে দ্রুত বিয়োজিত হয়, সেই কারণে একাধিক ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহৃত হয় যুক্তরাষ্ট্রে। যার মধ্যে রয়েছে পারদ, আর্সেনিক এবং সীসার মতো উপাদানও। যা মৃত্তিকা এবং জল— উভয়কেই দূষিত করে চলেছে ক্রমাগত। আবার কফিনের জন্য বাড়ছে বৃক্ষচ্ছেদনও। পাশাপাশি গবেষকরা এও জানাচ্ছেন, মানবদেহ সমাধিস্থ করার কারণে উৎপন্ন হয় মিথেনের মতো গ্রিন হাউস গ্যাস। যা কার্বনের থেকেও ২৫ গুণ তাপ আটকে রেখে ত্বরান্বিত করে বিশ্ব উষ্ণায়নকে। 

বলতে গেলে, এই প্রতিটা সমস্যারই সমাধান করতে সক্ষম হিউম্যান কম্পোস্টিং। পাশাপাশি তার খরচও দেহদাহ এবং সমাধিস্থ করার খরচের থেকে অন্ততপক্ষে হাজার গুণ কম। তবে সমস্যা একটাই, একটি পূর্ণাঙ্গ মানবদেহকে জৈবসারে পরিণত করতে গেলে সময় লেগে যায় ১৮০ দিন। কাজেই ব্যাপক হারে দেহ কম্পোস্টিং করতে গেলে, বড়ো আকারের পরিকাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যেই ক্রমশ এগোচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৭ সালের মধ্যেই ক্যালিফোর্নিয়া-সহ একাধিক রাজ্যেই গড়ে উঠবে এ-ধরনের পরিকাঠামো। তবে শুধু আমেরিকাই নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও হিউম্যান কম্পোস্টিং নিয়ে সচেতনতা গড়ে উঠলে তবেই বদলাবে পরিস্থিতি, অভিমত গবেষকদের…

Powered by Froala Editor