১৯৪৭ সাল, ১৫ আগস্ট। মধ্যরাতে স্বাধীন হল ভারতবর্ষ। আর এই স্বতন্ত্র পথ চলার শুভসূচনা হল তাঁর হাত ধরেই। লালকেল্লা থেকে ছড়িয়ে পড়ল সানাইয়ের সুর। উস্তাদ বিসমিল্লা খান এভাবেই জড়িয়ে রয়েছেন ভারতের মাটির সঙ্গে। কিংবদন্তি সানাই-বাদকের সেই ভিটে-মাটিই এবার গুঁড়িয়ে ফেলা হল বেনারস থেকে। মুছে দেওয়া হল ঐতিহ্য, ইতিহাসের স্মৃতিচিহ্নটুকু।
উত্তরপ্রদেশের বেনারসে এই বাড়ি ১৯৩৬ সালে কিনেছিলেন বিসমিল্লা খান। তাঁর এক অন্য মায়া জড়িয়ে ছিল এই বসতভিটের সঙ্গে। সারাজীবনই কাটিয়েছিলেন এই বাড়িতে। এসেছিল আমেরিকায় গিয়ে থাকবার প্রস্তাবনাও। তবে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বিসমিল্লা। জানিয়েছিলেন, আমারিকা কি তাঁকে একটা গঙ্গা উপহার দিতে পারবে সেখানে? পায়ে হেঁটে গঙ্গার ঘাটে যেতেন এই বাড়ি থেকেই। সকালের শান্ত বাতাসে চলত কয়েক ঘণ্টা সুরের চর্চা। ১৯৬৩ সালে হাদহা সরাইয়ে আরও একটি বাড়ি কিনেও ছাড়তে পারেননি এই বাড়িকে।
২০০৬ সালে তাঁর মৃত্যুর পর অনুরাগী এবং পরিবারের আত্মীয়রা দাবি জানিয়েছিলেন কিংবদন্তির এই বাড়িটিকে ‘হেরিটেজ বিল্ডিং’-এর আখ্যা দেওয়ার জন্য। শিষ্যরা দাবি করেছিলেন সেখানে তৈরি করা হোক মিউজিয়াম। কিন্তু সেসব তো দূরের কথা সেই বাড়ির ধ্বংসস্তূপের ওপরেই এখন গড়ে উঠতে চলেছে কমার্শিয়াল মাল্টিপ্লেক্স। সবথেকে আশ্চর্যের এই সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে তাঁর বংশধরদের মতামতই। প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও।
২০০৬ সালের ২১ আগস্ট এই বাড়ির মায়া কাটিয়ে চলে গিয়েছিলেন ‘ভারতরত্ন’ বিসমিল্লা খান। তাঁর ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আগামীকাল। আর তার প্রাক্কালেই এহেন এভাবে মুছে গেল ইতিহাস। এই বাড়িতেই বিসমিল্লা রেখে গিয়েছিলেন তাঁর সুর-সাধনার অসংখ্য মূল্যবান স্মৃতিচিহ্ন। যে-কোনো সঙ্গীতপ্রেমীর কাছে যা অমূল্য-রতন। ফেলে দেওয়া হয়েছে সেইসব ব্যবহৃত আসবাব, জিনিসপত্রও। এই ঘটনা এখনও অবধি বিশ্বাস করে উঠতে পারছেন না তাঁর পালিতা কন্যা এবং সঙ্গীতশিল্পী সোমা ঘোষ। অবাক সমগ্র সঙ্গীতজগত...
Powered by Froala Editor