জীবন নিয়ে আমরা যতটা পরিকল্পনা করি, ততটা হয়তো বাস্তবায়িত করে উঠতে পারি না। পরিবেশ নিয়ে এখন আমরা অনেকেই কম-বেশি ওয়াকিবহাল। কিন্তু নিজের জীবনে তার কতটা প্রয়োগ করতে পারি, সে বিষয়ে যথেষ্ট প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। অথচ অসম্ভবকে সম্ভব করে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার উপায় বাতলালেন এই ব্যক্তি।
শুধুমাত্র মাটি এবং বাঁশ দিয়ে একটা আস্ত বাড়ি বানিয়েছেন কেরালার শ্রীধর রাধাকৃষ্ণন। পেশায় তিনি ইঞ্জিনিয়ার এবং পরিবেশবিদ। ত্রিবান্দ্রামের ব্যস্ত এলাকায় বাড়ি হওয়ায়, সেখানে বাস করা এতটুকুও পছন্দ ছিল না তাঁর। এত আওয়াজ এবং দূষণের বাইরে গিয়ে একটু পরিষ্কার হাওয়া এবং শান্তি চেয়েছিলেন তিনি।
নতুন বাড়ি খোঁজার জন্য চেষ্টা করলেও বাড়ি বানানোর দূষণ তিনি এড়াতে চাইছিলেন। অবশেষে শহরের প্রান্তে ভালিয়াভিলা, রাবার এস্টেটের মধ্যে তিনি একুশ সেন্ট জমি কেনেন। তারপরই শুরু হয় নতুন ধরণের বাড়ি তৈরির ভাবনাচিন্তা।
সেন্টার অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি ফর রুরাল ডেভেলপমেন্টের আর্কিটেক্ট পি বি সজনের সঙ্গে এরপর যোগাযোগ করেন শ্রীধর। তাঁর দাবি ছিল, পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিসপত্র দিয়েই বাড়ি বানানো বাড়ি বানানো হোক। যেমন কথা, তেমনই কাজ।
বাড়িটি মাটি এবং লেবু দিয়ে বানানো হয়। লেবু দেওয়া হয় যাতে পুরো মাটি সিমেন্টের মতোই শক্তপোক্ত হয়। অন্যদিকে, তখন মণিভবন বলে একটি বাড়ি ভাঙা হচ্ছিলো হাইরাইজ হবে বলে। তিরিশ হাজার পুরনো ইট এবং পুরনো বাড়ির রুফ টাইলস কেনেন সেখান থেকে। বাথরুমের টাইলস তিনি বন্ধ হতে বসা একটি দোকান থেকে কেনেন। কেমিক্যাল রঙের বদলে কেরালার ঐতিহ্য অনুযায়ী চালের গুঁড়ো দিয়ে ঘর রং করা হয়। যে কাঠ দিয়ে সিঁড়ি এবং বাতিদান বানানো হয় তাও পুরনো। বাড়ির সিলিংকে দাঁড় করানোর জন্য তিনি ব্যবহার করেছেন বাঁশ। তাঁর এই বাড়ির উন্মুক্ত বারান্দা এবং জানালা দিয়ে দূষণমুক্ত হাওয়া-বাতাস আসে। সমস্ত গিজার, ফ্যান, ইন্ডাকশন ইত্যাদিও চলে সোলার এনার্জিতে।
দশমাসে এই বাড়ি বানানো শেষ হলে শ্রীধর তাঁর পরিবার নিয়ে এখানে চলে আসেন। বাড়ির নাম দেন 'বসন্তম'। শ্রীধরের দাবি, তাঁর বাড়িতে ঘরের ভিতর গরমকালেও বেশ ঠান্ডা থাকে। এসিরও প্রয়োজন হয় না। বাড়িতে বৃষ্টির জল ধরে রাখার জায়গা আছে, কুয়ো খুঁড়ে সেখান থেকেই যাবতীয় জল ব্যবহার করেন শ্রীধর। বাড়িতে সবজি বাগান আছে, যেখানে বিনা রাসায়নিক দ্রব্যে সবজি চাষ হয়। বাড়তি সবজি শহরের অর্গ্যানিক ফার্মে বিক্রি করা হয়।
যখন সবাই কংক্রিটের দেওয়ালে বন্দি, তখন শ্রীধর এবং তাঁর পরিবার প্রকৃতির সবুজের মধ্যে শান্তিতে বাস করেছেন। পরিবেশ দূষণ আটকে নিজেদের মত করেই তাঁরা রক্ষা করছেন এই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল। শ্রীধরের এই উদ্যোগ সকলের শিক্ষণীয় হওয়া উচিৎ।