সেবাকে যদি ধর্ম ধরা হয়, তবে তার কোনো দেশ নেই। ডাঃ এড্রিক বেকার তার জ্বলন্ত উদাহরণ। বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার কালিয়াকুড়িতে রয়েছে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত হাসপাতাল। সেই হাসপাতালেওই দায়িত্ব নিজেদের হাতে তুলে নিলেন ডাক্তার দম্পতি জেসিন ও মেরিন্ডি।
'৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ চলছে তখন। গোটা বাংলাদেশ কাঁদছে পাকিস্তানের তীব্র অত্যাচারে। এড্রিক সেই সময়ে ভিয়েতনামেই একটা চিকিৎসা দলের হয়ে কাজ করছেন। বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের শেষমেশ জিতে যাওয়া তাঁকে খুশি করেছিল খুব। নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনের এড্রিক বাংলাদেশে আসেন তারপরই। এই মাটির সঙ্গে এতটা প্রবল জড়িয়ে যান যে, ফিরে যেতে পারেননি আর। টানা তিন দশকের বেশি সময় ধরে তিনি দরিদ্র মানুষের সেবাতে নিয়োজিত ছিলেন। প্রথমে মেহেরপুর মিশন হাসপাতাল থেকে শুরু করে মধুপুরের নিজের হাসপাতাল। ২৩টি মাটির ঘর বিশিষ্ট এই হাসপাতালে ৪০ জন রোগী ভর্তি থাকতে পারে একসঙ্গে। বহির্বিভাগে দেখাতে পারেন ২০০ জন। আট থেকে আশি সবার কাছেই এড্রিক ছিলেন ‘ডাক্তার ভাই’। সেই অসীম সাহসী এই কিউয়ি ডাক্তার শেষ বয়েসে এসে দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হলে, ঢাকা নিয়ে যাওয়ার সুযোগটুকু দেননি। সেপ্টেম্বর ২০১৫তে, শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী নিজের হাসপাতালেই দেহ রাখেন তিনি। এড্রিককে সমাধিস্থও করা হয়েছে সেখানেই।
প্রিয় ডাক্তারের মৃত্যুতে থেমে যায়নি তাঁর স্বপ্নের সেবাকেন্দ্র। হাল ধরেন সুদূর আমেরিকার এক নবীন ডাক্তার দম্পতি। জেসিন ও মেরিন্ডি ২০০৯ সালে প্রথম আসেন কালিয়াকুড়িতে ডাঃ বেকারের ডেরায়। ভালো লেগে যায় তাঁদের। এড্রিকের মৃত্যুর পর ২০১৮তে আমেরিকার পাট চুকিয়ে পাকাপাকি ভাবে সস্ত্রীক জেসন চলে আসেন বাংলাদেশে। সঙ্গে নিয়ে আসেন তাঁদের সন্তানদেরও। তারাও এখন এই বাংলার আলো হাওয়াতেই বড় হচ্ছে। গ্রামের স্কুলেই নিয়ম করে পড়াশুনো। গ্রামের 'নতুন ডাক্তার ভাই' হয়ে ওঠা জেসিনকে নিয়ে গ্রামের উৎসাহ আকাশছোঁয়া। সঙ্গে দোসর মেরিন্ডি হলেন 'ডাক্তার দিদি'।
বাংলাদেশের এই প্রত্যন্তে বয়ে চলা ভালোবাসা ও সেবার এই যুগলবন্দি তর্কাতীত ভাবে দৃষ্টান্তমূলক।