ক্যালেন্ডারের পাতায় দিনটা ছিল ১৯৮৯ সালের ৪ জুন। দীর্ঘদিন ধরেই বেজিং শহরের তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ারে গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন চিনের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। ৪ জুন রাতে আচমকাই তাঁদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে সামরিক বাহিনী। সরকারি হিসাবে মাত্র ২০০ জনের মতো পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছিল। তবে বেসরকারি মতে সংখ্যাটা ছিল কয়েক হাজার। পৃথিবীর ইতিহাসে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের কুৎসিততম ঘটনাগুলির একটি এই তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার হত্যাকাণ্ড (Tiananmen Square Massacre)। অথচ গোটা চিন (China) দেশে এই ঘটনার স্মৃতিতে কোনো চিহ্নই অবশিষ্ট নেই। একমাত্র হংকং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছিল একটি ভাস্কর্য (Pillar Of Shame Statue)। বুধবার রাতে সেই ভাস্কর্যটিও ভেঙে ফেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
১৯৯৭ সালে হংকং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মূর্তিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। একের পর এক মানুষের মুখ জুড়ে জুড়ে তৈরি প্রায় ৮ মিটার উঁচু একটি মনুমেন্ট। আর মানুষের মুখগুলি প্রতিটিই ছিল তিয়েন-আন-মেন হত্যাকাণ্ডের শহিদদের মুখ। তারপর ২৪ বছর কেটে গিয়েছে। গোটা চিনদেশ থেকেই মুছে ফেলা হয়েছে তিয়েন-আন-মেনের স্মৃতি। ৯০-এর দশকে প্রথম কয়েক বছর শহিদদের স্মৃতিতে মিছিলের আয়োজনও করতেন চিনের নাগরিকরা। কিন্তু পরবর্তীকালে সমস্ত শহরের প্রশাসনই এইসমস্ত মিছিল নিষিদ্ধ করেছিল। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল হংকং শহর। চিনের গণতন্ত্রের শেষ আলোকস্তম্ভ হিসাবে মনে করা হত হংকং শহরকে। তবে সেই শহরেও এবার একই দৃশ্য ধরা পড়ল।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মূর্তিটিকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সামনে একটি অশনি সংকেত, এমনটা এর আগেও বহুবার বলেছে বেজিং সরকার। সেই অশনি সংকেত এবার মুছে ফেলা হল। অবশ্য শুধু এটুকুই নয়। গতবছর তিয়েন-আন-মেনের ঘটনার সমর্থনে নাগরিক মিছিলেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল হংকং প্রশাসন। এর পরেও মিছিলের আয়োজন করা হলে সেখানে গুলি চালায় পুলিশ। ১০ জন আয়োজককে গ্রেপ্তারও করা হয়। অবশ্য শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ আন্দোলনের উপর এমন রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের ঘটনা চিনে নতুন নয়। কিন্তু হংকং শহর কিছুটা ব্যতিক্রমই ছিল। চিনের নতুন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা আইন সেই পার্থক্যটাও পুরোপুরি মুছে দিতে চলেছে। আর সেইসঙ্গে মুছে ফেলা হচ্ছে ইতিহাসও। তিয়েন-আন-মেনের স্মৃতি হয়তো সত্যিই এবার মুছে যাবে চিনের নাগরিকদের মন থেকে।
Powered by Froala Editor