দ্রুততম মহিলা পর্বতারোহী হিসেবে এভারেস্ট জয় চিনের শিক্ষিকার

সকাল থেকেই এভারেস্ট বেসক্যাম্পে শুরু হয়ে গিয়েছিল প্রস্তুতি। এবারে আবহাওয়া তেমন প্রতিকূল নয়। ঠিক ১১ দিন আগেই একবার যাত্রা করেছিলেন তাং ইন-হাং। কিন্তু সেবারে কিছুক্ষণের মধ্যে দুর্যোগ শুরু হয়। ফলে কিছুদূর এগিয়েই ফিরে আসতে হয়। এবার তেমনটা হবে না নিশ্চই। একটু একটু করে সূর্য উঠল মাথার উপরে। যাত্রা শুরু করলেন তাং। আর দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ শিখরে। নেহাতই এভারেস্ট জয় নয়, বরং চিনের পর্বতারোহী তাং তৈরি করলেন এক নতুন রেকর্ড। পৃথিবীর দ্রুততম মহিলা পর্বতারোহী হিসাবে পৌঁছে গেলেন এভারেস্টের চূড়ায়।

২২ মে স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ২০ মিনিটে বেসক্যাম্প থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন তাং। পর্বতের চূড়ায় যখন উঠলেন তখন ঘড়ির কাঁটা পরের দিন দুপুর ৩টে ১০ মিনিটে। অর্থাৎ বেসক্যাম্প থেকে চূড়ায় পৌঁছতে সময় লেগেছে মাত্র ২৫ ঘণ্টা ৫০ মিনিট। পূর্ববর্তী রেকর্ডের থেকে তা অনেকটাই কম। এর আগে ২০১৭ সালে ৩৯ ঘণ্টা ৬ মিনিটে এভারেস্ট জয় করেছিলেন নেপালের পর্বতারোহী ফুনজো ঝাংমু লামা। তাং-এর রেকর্ড তার থেকে ১৩ ঘণ্টার চেয়েও দ্রুত।

ছোটো থেকেই নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে এগোতে হয়েছে তাং ইন-হাংকে। চিনের মূল ভূখণ্ড ছেড়ে যখন তাঁর পরিবার হংকং-এ আশ্রয় নেয়, তখন তাঁর বয়স ১১। সেই থেকেই শুরু হয়ে যায় লড়াই। পড়াশোনার চেয়ে খেলাধুলোতেই তাঁর আকর্ষণ বরাবরের। কিন্তু উপযুক্ত প্রশিক্ষণের সুযোগ কোথায়? বাবা-মায়ের সেই আর্থিক সংগতিই যে নেই। তবু কোনোমতে স্কুলের অবৈতনিক প্রশিক্ষণ শিবিরেই সুযোগ মিলল। প্রথম প্রথম বেসবল খেলায় বেশ নাম করেছিলেন তিনি। কিন্তু ঠিক ২৩ বছরের মাথায় যেদিন পর্বতারোহণের সুযোগ পেলেন, সেদিন থেকেই তাঁর স্বপ্ন এভাররেস্ট জয় করা। তখন তিনি পেশায় শিক্ষিকা। সুযোগও মিলল ২০১১ সালে। কিন্তু শুধুই এভারেস্ট জয় করে তাঁর মন তৃপ্ত হয়নি। এমনটা তো প্রতি বছরই কয়েকশো অভিযাত্রী করে দেখাচ্ছেন। তাং চেয়েছিলেন তাঁর যোগ্যতার প্রকৃত মূল্যায়ন। তাই বারবার ভেঙেছেন নিজেকে। সমস্ত প্রস্তুতি নিয়ে ১১ মে রওয়ানা হলেন। কিন্তু তার পরেও চূড়ায় পৌঁছতে পারলেন না। অবশেষে ২৩ মে তৈরি হল রেকর্ড।

করোনা অতিমারীর কারণে এভারেস্ট অভিযানের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিধিনিষেধ জারি করে রেখেছে নেপাল সরকার। অথচ এর মধ্যেই একের পর এক রেকর্ড তৈরি করে চলেছেন পর্বতারোহীরা। এই বছরই বরিষ্ঠতম এভারেস্টজয়ীর রেকর্ড তৈরি করলেন ৭৫ বছরের মার্কিন অভিযাত্রী আর্থার মুয়ের। এশিয়ার প্রথম দৃষ্টিহীন এভারেস্টজয়ী হিসাবে নাম তুলে নিয়েছেন চিনের পর্বতারোহী জ্যাং। আর সেই তালিকাতেই আরও এক নতুন রেকর্ড তৈরি করলেন তাং। পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে এভাবেই লেখা হয়ে যাচ্ছে ইতিহাস।

আরও পড়ুন
এভারেস্টে অক্সিজেন সিলিন্ডার ফেলে না-আসার নির্দেশ পর্বতারোহীদের

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
২৫ বার এভারেস্ট জয় করে বিশ্বরেকর্ড পর্বতারোহীর

More From Author See More