কথায় বলে, মধুর মতো মিষ্টি। অথচ মৌমাছির চাক ভেঙে মধু তুলে আনা যে কত কঠিন কাজ, তা কমবেশি আমরা সবাই জানি। মানুষ তার জীবনকে তার প্রয়োজনের সাথে পাল্টেছে, বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষ অর্জন করেছে নানা কঠিন অভ্যাস। নেপালের চেস্কাম গ্রামের মৌয়ালরাও অভ্যেস করে ফেলেছে দুর্গম পাহাড়ের উঁচু থেকে মধু উদ্ধার করার কৌশল।
এভারেস্টের কোল ঘেঁষে এই চেস্কাম গ্রাম। সেখানে পৌঁছানোর পথ এতটাই কঠিন যে, কাঠমান্ডু থেকে গ্রামটিতে পৌঁছাতে প্রায় ৫-৬ দিন সময় লাগে। আর এখানেই পাহাড়ের ঢালে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মৌমাছির বসবাস। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই মধু খুব সাইকোডেলিক। মূলত বসন্তে এই মধুর প্রাচুর্য দেখা যায়।
কালোবাজারে অনান্য প্রকারের মধুর থেকে প্রায় ৪-৫ গুণ বেশি দামি বিক্রি হওয়া এই মধু বিশ্বে 'ম্যাড হানি' নামে পরিচিত। অথচ এ-মধু সংগ্রহ করা এতটাই কঠিন যে, ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয়। এখানকার মৌয়ালদের অমানুষিক পরিশ্রম করে মধু আহরণ করতে যেতে হয়। জনজাতি থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন এই অঞ্চলে মেলে না কোনো আধুনিক যন্ত্রপাতি, তাই সেসব ছাড়াই লতানো গাছের দড়ি বেয়ে এখানকার মৌয়ালরা মধু সংগ্রহ করেন। রয়েছে হাজারো অনিশ্চয়তা, একটু ভুল হলেই কয়েক হাজার ফিট নিচে পড়ে যাবে শরীর, সেসব সত্ত্বেও পেটের দায়ে তাঁরা মধু সংগ্রহ করে আনেন। মৌমাছির কামড়ও দমিয়ে রাখতে পারেনি এঁদের সহনশীলতা ও অসীম ধৈর্যকে।
প্রায় শত বছর ধরে পাহাড়ের ঢালে এই উপায়ে মধু আহরণ করার পদ্ধতি অনুসৃত হচ্ছে। ইচ্ছে না থাকলেও, জীবনকে বাজি রেখে পেটের দায়ে এঁরা এই পেশা বেছে নিয়েছেন। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই আমাদের পূর্বপুরুষরা চেষ্টা করেছে প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার। সে-চেষ্টা যে এখনও অক্ষত, তার প্রমাণ মেলে চেস্কাম গ্রামের মৌয়ালদের এই লড়াই দেখে।