তখন তাঁর বয়স ছিল ২০ বছর। হঠাৎই হারিয়ে যান তিনি। অনেক খোঁজ করলেও মেলেনি হদিশ। ধীরে ধীরে তাঁর স্মৃতিও মুছে আসতে থাকে। ক্ষীণ হয় ফেরার আশা। পনেরো বছর পর। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তাঁর মৃত্যুর সার্টিফিকেটও বানিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু প্রায় পঞ্চান্ন বছর পর, নিজের গ্রামে ফিরে এলেন তিনি। আজ তাঁর বয়স সত্তর পেরিয়েছে। কালের নিয়মে কাঁধ ঝুঁকেছে, অবনতি হয়েছে শরীরের। কিন্তু এমন নবজন্মের ঘটনা শুনলে চমক লাগে বইকি! চারু বাসর নামের এই ভদ্রলোকের জীবনকাহিনি ঠিক এমনই।
দীর্ঘ এতগুলো বছর চারুবাবুর জীবন কেটেছে উত্তর চব্বিশ পরগণার সোদপুর রেলওয়ে স্টেশন চত্বরে। তবুও ঘরে ফেরার আশা কখনো ছাড়েননি তিনি। একটা করে ট্রেন আসত, আর তিনি অপেক্ষা করতেন তাঁর কোনো আত্মীয়ের। স্মৃতি হারিয়েছেন আগেই, তাই বাসস্থানের হদিশ দিতে পারতেন না কিছুতেই। স্মৃতি জুড়ে ভেসে উঠত কেবল একটা পেপার মিল আর মাঠের দৃশ্য।
আর এই দৃশ্যকে ভরসা করেই তাঁকে ঘরে ফিরিয়ে দেওয়ার দীর্ঘ চেষ্টা চালিয়ে গেছে ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাব। ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট হীরালা সিনহা জানান, চারুবাবুর মানসিক কিছু সমস্যাও তৈরি হয়েছিল। বহু জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা যায়, তিনি যখন ঘর ছাড়েন তখন তাঁর একটি ভাই ও বোনকে ছেড়ে এসেছিলেন।
এটুকু তথ্যই একটা মানুষের নবজন্ম ঘটাল। ওড়িশার রেডিও অপারেটর দুষ্মন্ত কুমার দাসের সহযোগিতায়, ঝারসুগাদায় দেখা মিলল সেই মাঠের। সেখানকার মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে খোঁজ পাওয়া গেল চারুবাবুর বোন রুমারও। কিন্তু এতদিনে তিনিও বৃদ্ধ হয়েছেন, দুর্বল হয়েছে তাঁর স্মৃতি। তাই তাঁর ছেলের সঙ্গে কথা বলে বাসর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন দুষ্মন্ত দাস।
রেডিও ক্লাবের তৎপরতায় জীবন ফিরে পাওয়ার এমন ঘটনা বিরল। না জানি, কত মানুষ তাদের ভিটেমাটি ছেড়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু এ-ধরণের উদ্যোগ আগামীতে আরও বহু মানুষকে তাদের ঘরে ফিরিয়ে দেবে, অন্তত চাইলে যে সম্ভব, তার উদাহরণ হয়ে রইল এই ঘটনা।