দীর্ঘ আতঙ্কের শেষে একটু একটু করে শুরু হয়েছে ভ্যাকসিনেশন। মানুষ দীর্ঘ প্রতীক্ষার শেষে টিকা নিয়ে অপেক্ষা করছেন। আগামী পাঁচ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণের মধ্যে থাকতে হবে। এই সময় কারোর শারীরিক সমস্যা দেখা যাচ্ছে। বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই সমস্যা হচ্ছে মানসিক। ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলতেই বলতেই মিডউডের নার্সিং ছাত্রী সিলিভিয়া ব্যাপটাইস্টের আলাপ হল এক আশ্চর্য বৃদ্ধার সঙ্গে। তাঁর চোখেমুখে ভয় নেই। বরং হাসিমুখে বলছেন, এর থেকে অনেক ভয়ঙ্কর সময় তো তিনি দেখেছেন।
হ্যাঁ, করোনা অতিমারীর থেকেও ভয়ঙ্কর সময়। ইতিহাসে এমন কোনোদিন ঘটেছিল নাকি? এমন প্রশ্ন যাঁরা করবেন, তাঁরা হয়তো হলোকাস্টের কথা ভুলে গিয়েছেন। নিষ্ঠুর নাৎসি বাহিনীর সামনে তখন ইহুদিরা পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত প্রাণী মাত্র। ৯৭ বছরের মিরা রোসেনবেল্ট সামনে থেকে দেখেছেন সেইসব দিনগুলি। ১৯৩৯ সালে প্রথম যখন ইহুদি ঘেটোতে গেলেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৫ বছর। চোখের সামনে বাবা-মার মর্মান্তিক মৃত্যু দেখেছেন। তবে রোসেনবেল্ট কোনোরকমে বেঁচে যান। ঘেটোর দেয়াল থেকে কেঁচো আর মাটি খেয়েই নিজের প্রাণ বাঁচিয়ে রেখেছিলেন তিনি।
ক্রমশ মোড় ঘুরেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। নাৎসি কবল থেকে মুক্তি পেয়েছেন বেঁচে যাওয়া ইহুদিরা। ১৯৪৫ সালে ২১ বছরের রোসেনবেল্ট মুক্তি পেলেন। এর কিছুদিন পরেই তাঁর বিবাহ হল অসউইৎজ ঘেটোর বন্দি এক পোলিশের সঙ্গে। আজও মিসেস রোসেনবোল্টের মনে দগদগে সেইসব দিনের স্মৃতি। ২০১৮ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত অসউইৎজের গল্প শোনাতেন মিস্টার রোসেনবোল্ট। আজ সেইসব গল্পকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পালন করছেন মিসেস রোসেনবোল্ট। দীর্ঘ লকডাউনে কাউকেই শোনাতে পারেননি সেইসব কাহিনি। এতদিন পর স্মৃতি উগরে দিয়েছেন হাসপাতালের এক নার্সিং ছাত্রীর কাছে। আর মিস ব্যাপটাইস্টও মন দিয়ে শুনেছেন সেই কাহিনি। এভাবেই তো গল্পে গল্পে বোনা থাকে ইতিহাস। আর সেই কঠিন সময়ের ইতিহাস আজও মানুষকে এগিয়ে যাওয়ার অন্য প্রেরণা জোগায়।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের থেকেও বেশি কোভিডে মৃতের সংখ্যা! ভয়াল পরিস্থিতি আমেরিকায়