“প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারদের হাত ধরেই তৈরি হচ্ছে গ্যাস চেম্বার। উচ্চশিক্ষিত চিকিৎসকরা তৈরি করছেন মারণ বিষের ইঞ্জেকশন। তারপর নার্সরা সেই বিষাক্ত তরল ঢুকিয়ে দিচ্ছেন ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের শরীরে। কলেজ, উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের হাত বন্দুক ধরিয়ে দিয়ে, তাঁদের দিয়েই হত্যা করানো হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ফলত, এই শিক্ষা নিয়ে আমার গভীর সন্দেহ রয়েছে।”
আজ থেকে প্রায় ছ’দশক আগে নিজের লেখা বই ‘বিটউইন প্যারেন্ট অ্যান্ড চাইল্ড’-এ এমনটাই আক্ষেপ করেছিলেন শিক্ষাবিদ ও মনোবিদ হাইম জিনোট। আর তা হবে না-ই বা কেন? বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতাকে যে নিজের চোখের সামনে দেখেছিলেন তিনি। নিজে শিকার হয়েছিলেন হলোকাস্টের।
১৯২২ সালে হাইমের জন্ম ইজরায়েলের তেল হাভিভে। অষ্টাদশ পেরনোর আগেই হাইম সাক্ষী হয়েছিলেন নাৎসি আগ্রাসনের। জাতিগতভাবে তিনি ইহুদি। অন্যদিকে হিটলারের আগ্রাসন বাড়ছে ক্রমশই। সে-সময়ই সপরিবারে নাৎসি ক্যাম্পে বন্দি হয়েছিলেন হাইম। তবে শেষ অবধি প্রাণ রক্ষা হয় তাঁর। ক্যাম্প পরিবর্তনের সময় দেশ ছেড়ে আমেরিকায় গিয়ে আশ্রয় নেন হাইম। পরবর্তী কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকতা করার পর শিক্ষকতা শুরু করেন একটি মার্কিন বিদ্যালয়ে।
তবে বিশ্বযুদ্ধের বিধ্বংসী স্মৃতি পিছু ছাড়েনি তাঁর। কাজেই, শিক্ষার পরিবর্তে মানুষ গড়ার লক্ষ্য নেন হাইম। মানবাধিকার এবং মনস্তত্ত্ব নিয়ে একাধিক উল্লেখযোগ্য কাজ করেন তিনি। নিজের লেখায় বার বার অভিভাবকদের আর্জি জানিয়েছেন, ‘শিক্ষিত সাইকোপ্যাথ করবেন না আপনাদের সন্তানকে’। স্কুলের অধ্যাপক থাকাকালীনও অন্যান্য শিক্ষকদের নিজের হলোকাস্টের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন, যাতে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মানুষ হয়ে ওঠার পাঠ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন
নাৎসিদের বিরুদ্ধে গানই অস্ত্র ‘জলদস্যু’দের, দিতে হয়েছিল প্রাণও
বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ— তা নিয়ে তর্ক হয়েছে বিস্তর। তবে শুধুই কি তাই? বিজ্ঞান হোক বা ইতিহাস— যে কোনো বিষয়ের উপস্থাপনাই হিংসার বীজ বুনে দিতে পারে মানুষের মননে। গতকালই পেরিয়ে গেল আরও একটি শিক্ষক দিবস। পালিতও হল দেশজুড়ে। কিন্তু আদৌ কি খুব কিছু এগোতে পেরেছি? আজও মাঝেমাঝেই বিক্ষিপ্তভাবে জ্বলে ওঠে সাম্প্রদায়িক হিংসার আগুন। এমন একটা পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে হাইমের সেই চিঠিই যেন আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে…
আরও পড়ুন
৭৭ বছর পর উদ্ধার হলোকাস্টের দুই অজানা শিশুর পরিচয়
Powered by Froala Editor