“হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কাণ্ডারি! বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার”
সত্যিই তো! মনুষ্যত্বের কি কোনও ধর্ম আছে? বিপদের সামনে দাঁড়িয়ে, কত সময় জাতি-ধর্ম-বর্ণ সমস্ত পরিচয় ভুলে কেবল একটা পরিচয়কেই গুরুত্ব দিয়েছে লোকজন। মানুষ। সেটা আজকের এই পরিস্থিতিতে যেমন সত্য, তেমনই সত্যি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়ংকর ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে। নিজেদের জীবনের পরোয়া না করে, নাৎসিদের হাত থেকে বহু ইহুদিকে বাঁচিয়েছিলেন মুসলিমরা। অথচ সেই কাহিনি বলার লোক নেই। শোনার লোকও কি আছে?
মুসলিম এবং ইহুদিরাও একটা সময় পরস্পরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল। লড়াইও হয়েছিল তাঁদের মধ্যে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এমনই একটা মুহূর্ত, যেটা সমস্ত মানুষের ওপর নিজের ভয়ংকর ছাপ ফেলে যায়। সেই সময় ইহুদিদের ওপর কীরকম অত্যাচার চলত, সেটা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি বাহিনীর কুখ্যাত ‘হলোকাস্ট’-এর লক্ষ্য ছিল ইহুদি নিধন। তবে মানবিক মুখও ছিল সেই সময়। নানা ভাবে ইহুদিদের সাহায্য করেছিলেন বেশ কিছু ব্যক্তি। খালেদ আব্দুল ওয়াহাব, নুর ইনায়াত খান, আলবানিয়ার পিলকুস পরিবার প্রমুখরা ছিলেন সেই ব্যক্তিদেরই অন্যতম। ধর্ম নয়, জীবনের পরোয়া না করে বহু ইহুদিদের বাঁচার কথা ভেবেছিলেন তাঁরা।
যেমন আলবানিয়ার পিলকুস পরিবার। নাৎসিদের হুমকি অগ্রাহ্য করেও গোপনে আশ্রয় দিয়েছিলেন যোহানা নিউম্যান এবং তাঁর মা-কে। ঘুণাক্ষরেও বাইরের কাউকে জানতে দেননি তাঁদের কথা। বলেছেন এরা জার্মানি থেকেই এসেছে বিশেষ কাজে। সেই কথা আজও স্বীকার করেন যোহানা। এছাড়াও, খালেদ ওয়াহাব ২৪ জনেরও বেশি ইহুদিকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। আব্দুল সারদারি কয়েক হাজার ইহুদিকে নাৎসি আগ্রাসন থেকে পালাতে সাহায্য করেছিলেন। এরা সবাই যে পরে রক্ষা পেয়েছিলেন, তা নয়। কিন্তু নিজের জীবনের পরোয়া করেননি তাঁরা। ভরসা দিয়েছিলেন সেই সব মানুষদের, যারা তাঁদের থেকেও বিপদের অবস্থায় ছিলেন। এই মানুষগুলোর জন্যই এক সময় বহু লোকের জীবন বেঁচে গিয়েছিল। ধর্মীয় আগ্রাসন, হিংসাকে মুছে ফেলে যদি এই পন্থাই যুগে যুগে, কালে কালে পৃথিবীর সর্বত্র দেখা যেত, তাহলে বোধহয় পৃথিবী সতত সুন্দর হত।