আচ্ছা, যদি বলি মানুষ চাঁদে যেতে পেরেছে নাৎসি জার্মানির জন্য? অবাক হচ্ছেন শুনে? এই তো এতদিন ধরে ইতিহাসে পড়ে এসেছেন আমেরিকার কথা। এই দেশই নাকি প্রথমবার চাঁদে মানুষ নামায়। তাহলে কি নীল আর্মস্ট্রং, অ্যাপোলো মিশন সব ভুয়ো? না সেসব কিছু বলা হচ্ছে না। মহাকাশযাত্রাটি আমেরিকার পক্ষ থেকেই করা হয়েছিল। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, এই পুরো ব্যাপারটায় যেসব বিজ্ঞানীরা জড়িত ছিলেন, তাঁরা অনেকেই ছিলেন নাৎসি বিজ্ঞানী! হিটলারের খাস লোক…
এখানেই চলে আসবে অপারেশন ‘পেপারক্লিপ’-এর কথা। গোড়া থেকেই শুরু করা যাক। তখনও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগুন নেভেনি। ফলাফল কী হবে, সেটা একটু একটু করে বোঝা যাচ্ছিলই। কিন্তু হিটলার তো এত সহজে হেরে যাওয়ার পাত্র নন। অত্যাচার যেমন বাড়ছে, তেমনই আক্রমণও বাড়ছে। যুদ্ধে অংশ নেওয়া প্রতিটা দেশই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে প্রচুর গবেষণা করছে। তবে সবথেকে অদ্ভুত কাজটি শুরু হল জার্মানিতে। অদ্ভুত না বলে বরং বলা যাক আশ্চর্যের। জার্মানির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। আইনস্টাইন নিজেও জার্মানিতেই জন্মেছিলেন, সেখানেই বেড়ে উঠেছিলেন। পরে অবশ্য চলে যান আমেরিকায়…
তবে একা আইনস্টাইনই ছিলেন না। আর সবাই অন্য দেশেও চলে যাননি। হিটলারের সঙ্গে তাঁর নাৎসি বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন অনেক প্রতিভাবান বিজ্ঞানী। তাঁদের মধ্যে আছেন ওয়ের্নহার ভন ব্রাউন, কার্ট হেনরিক ডিবাসের মতো বিজ্ঞানীরা। আর সামনে আসছে নতুন নতুন সব অস্ত্র। এরই মধ্যে নাৎসিদের হাতে এল ভি-১ ও ভি-২ রকেট। বিশ্বের প্রথম লং-রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিসাইল। এমন ভয়ংকর সব অস্ত্র জার্মানির হাতে আসছে কী করে? তাহলে তো ওঁদের বিজ্ঞান বেশ উন্নত! এবং, বিজ্ঞানীরাও…
কিন্তু সমস্তরকম চেষ্টা করার পরও নাৎসিদের পরাজয় হল। হিটলারের পতনের পর আমেরিকা চলে গেল জার্মানিতে। সেখানকার নাৎসি ক্যাম্প এবং বাকি জায়গা দেখে চক্ষু চড়কগাছ! এরা তো পুরো তৈরি হয়ে মাঠে নেমেছিল! আর কী সব ভয়ংকর সব অস্ত্র! কিছু তৈরি হয়েছে, কিছু হয়নি। হিটলারের বিজ্ঞানীরা যে এত বিপুল পরিমাণে নার্ভ এজেন্ট তৈরি করেছে, তা তো ধারণাতেই ছিল না। শুধু তাই নয়, গবেষণাগারে বিউবনিক প্লেগ তৈরি করে সেই রোগকে গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও ছিল। এরকম আরও কত কি! শিউরে উঠল সবাই। এবং সবার নিশ্চয়ই মনে আছে, মহাকাশে বিশাল বড়ো আতস কাচ লাগিয়ে, সূর্যের আলোকে হাতিয়ার করে শহর ধ্বংস করার পরিকল্পনাও ছিল জার্মানির। এমন মাথা যাঁদের, তাঁরা আর কি না করতে পারে…
এখানেই প্রমাদ গুনল আমেরিকা। কেমন হয়, যদি এই সব অস্ত্র, এমন বৈজ্ঞানিক মাথা আমাদের কাছে চলে আসে? আমেরিকা তো আরও আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে! কিন্তু, এখানে একটা মুশকিল। আমেরিকা তো একা নজর রাখেনি; তার সঙ্গে যে আছে রাশিয়াও। বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে তো কী হয়েছে! ঠান্ডা লড়াই তো শুরু হয়ে গেছে। রাশিয়ার কাছে যদি এসব চলে যায়, তাহলে তো…
এদিকে খোলা আকাশেও তো এসব নিয়ে যাওয়া যাবে না। সবাই জেনে যাবে। আমেরিকার যে ওই নাৎসি বিজ্ঞানীদের চাই-ই চাই। ব্যস, সঙ্গে সঙ্গে শুরু হল গোপন বৈঠক। জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স অবজেক্টিভস এজেন্সি এবং আর্মি কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স কর্পস মিলে আলাপ আলোচনা চলল। ঠিক হল, সোজা রাস্তায় না হলে বাঁকা রাস্তায় নিয়ে আসতে হবে ওঁদের। এমনভাবে কাজ করতে হবে যাতে ওঁরা সবাই কেবলমাত্র আমেরিকার হয়েই পরবর্তীতে কাজ করে। তার জন্য সবকিছু করা হবে। জন্ম নিল ‘অপারেশন পেপারক্লিপ’।
আরও পড়ুন
‘আমার কারোর থেকে উপদেশ নেওয়ার প্রয়োজন নেই’, হিটলারকে জবাব সুভাষচন্দ্রের
শেষ পর্যন্ত সফল হল পরিকল্পনা। প্রায় ১৮০০ নাৎসি বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার, প্রযুক্তিবিদদের নিয়ে আসা হল আমেরিকায়। প্রত্যেকের বিজ্ঞান প্রতিভা নিয়ে সন্দেহের জায়গা নেই। নিজের নিজের কাজে তাঁরা সবাই দক্ষ। আর সেটাই ব্যবহার করতে চাইল আমেরিকা। ওয়ের্নহার ভন ব্রাউন, কার্ট হেনরিক ডিবাস, হারবার্ট ওয়েগনার, এবারহার্ট রিইসের মতো বিজ্ঞানীদের ধাপে ধাপে নানা জায়গায় যুক্ত করা হল। পরবর্তীকালে এই বিজ্ঞানীদের জন্যই ইতিহাস তৈরি করেছিল আমেরিকা। উদাহরণ দিই? অ্যাপোলো মিশনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন বিজ্ঞানী ওয়ের্নহার ভন ব্রাউন। মূলত তাঁর তত্ত্বাবধানেই জীবন পেয়েছিল এই মহাকাশযাত্রা। কার্ট ডিবাস তো নাসার ডিরেক্টরও হয়েছিলেন পরবর্তীকালে! হান্স জিগলারের মতো কিংবদন্তি ইঞ্জিনিয়ার-বিজ্ঞানীও ছিলেন। ভাবুন, একই মানুষ— দুটো জায়গাতেই নিজের মেধা লাগিয়েছেন। তৈরি করেছেন একের পর এক জিনিস। কিন্তু দুটোর মেরু দুরকম।
Powered by Froala Editor