২৩ এপ্রিল। আজকের দিনটা আর পাঁচটা সাধারণ দিনের মতো হলেও, রাষ্ট্রপুঞ্জের ক্যালেন্ডারে এই তারিখটি নথিবদ্ধ রয়েছে ‘বিশ্ব বই দিবস’ হিসাবে। হ্যাঁ, প্রতিবছর বিশ্ব গ্রন্থ দিবস ও স্বত্ব দিবস (World Book And Copyright Day) হিসাবেই পালিত হয় ২৩ এপ্রিল। কিন্তু কবে থেকে শুরু হল এই উদযাপন? কেন-ই বা বেছে নেওয়া এই বিশেষ দিনটিকে?
পিছিয়ে যেতে হবে প্রায় ৪০০ বছর। ১৬১৬ সাল। আজকের তারিখেই প্রয়াত হয়েছিলেন কিংবদন্তি স্প্যানিশ কবি মিগুয়েল দে সার্ভান্তেজ। আধুনিক স্প্যানিশ সাহিত্যের হাতেখড়ি হয় সার্ভান্তেজের হাত ধরেই। এমনকি আজও সবচেয়ে জনপ্রিয় স্প্যানিশ লেখকদের তালিকায় প্রথম সারিতেই রয়েছেন সার্ভান্তেজ। কিংবদন্তি এই কবির মৃত্যু দিবসকে স্মরণীয় করে রাখতে, আজ থেকে ঠিক ১০০ বছর আগে, ১৯২৩ সালের ২৩ এপ্রিল দিনটিকে ‘গ্রন্থ দিবস’ হিসাবে উদযাপন করেন তাঁরই ভাবশিষ্য তথা আরেক জনপ্রিয় স্প্যানিশ কথাকার ভিসেন্ট ক্লাভেল আন্দ্রেজ।
অবশ্য সে-সময় গ্রন্থ দিবসের এই উদযাপন শুধুমাত্র সীমিত ছিল স্পেনের বুদ্ধিজীবী ও সাহিত্যপ্রেমী মহলেই। আন্তর্জাতিক স্তরে তো দূরের কথা, তৎকালীন সময়ে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও দেওয়া হয়নি এই বিশেষ দিনটিকে। আর জন্য অপেক্ষা করতে হয় আরও সাত দশক। ১৯৯৫ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের শাখা সংগঠন ‘ইউনেস্কো’-র বৈঠকে ঠিক হয় বছরের একটি বিশেষ দিন পালিত হবে আন্তর্জাতিক গ্রন্থ দিবস উপলক্ষে। সার্ভান্তেজের স্মরণে ২৩ এপ্রিল দিনটিকে বই দিবস হিসাবে বেছে নেওয়া হোক, বৈঠকে আবেদন জানিয়েছিল স্পেন।
শেষ পর্যন্ত এই তারিখটিকেই গ্রন্থ দিবসের স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো। কারণ শুধু সার্ভান্তেজ নয়, ২৩ এপ্রিল কিংবদন্তি ইংরাজি নাট্যকার ও কবি উইলিয়াম শেক্সপিয়ারেরও মৃত্যুদিন। পাশাপাশি এপ্রিলের ২৩ তারিখেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন ইনকা ডে লা ভেগা, মরিস ড্রাওন, ম্যানুয়েল মেইয়া-সহ একাধিক খ্যাতনামা সাহিত্যিক। ঘটনাচক্রে আজকের তারিখেই প্রয়াত হয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়ও। গোটা বিশ্ব চলচ্চিত্রের জন্য তাঁকে চিনলেও, বাংলা সাহিত্যে অনস্বীকার্য অবদান রয়েছে তাঁর।
যাই হোক, ১৯৯৫ সালে প্রথমবার বিশ্ব গ্রন্থ দিবস পালিত হলেও, সে-সময় আলাদাভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি গ্রন্থস্বত্বকে। ২০০১ সালে, বই বিক্রেতা, প্রকাশক এবং বিশ্বের নানান প্রান্তের বিভিন্ন পাঠাগারের অনুরোধে ‘গ্রন্থ দিবস’-এর সঙ্গে ‘গ্রস্থস্বত্ব’-ও জুড়ে দেয় ইউনেস্কো। সেইসঙ্গে ঠিক হয় প্রতিবছর বিশ্বের ‘গ্রন্থ রাজধানী’ হিসাবে বেছে নেওয়া হবে একটি করে শহরকে।
২০০১ সালে বিশ্বের প্রথম ‘গ্রন্থ রাজধানী’-র তকমা পেয়েছিল স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ। চলতি বছরে এই শিরোপে পেয়েছে ঘানার শহর আক্করা। পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আদিবাসী ভাষার সাহিত্যকে মূল স্রোতে নিয়ে আসা এবং সংরক্ষণের তাগিদে চলতি বছরে বিশ্ব গ্রন্থ দিবসের থিম ধার্য করা হয়েছে ‘ইনডিজিনাস ল্যাঙ্গুয়েজ’। কিংবদন্তি সাহিত্যিকদের শ্রদ্ধা জানানো তো বটেই, অস্বীকার করার জায়গা নেই শিক্ষার প্রসার ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে ২৩ এপ্রিল তারিখটির।
Powered by Froala Editor