বাংলা এবং অবশ্যই হিন্দি সিনেমা যারা দেখেন, তাঁরা একটা ব্যাপার নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন। সিনেমায় অধিকাংশ মধ্যবর্তী পরিবারে যে সমস্ত জিনিস দেখা যায়, তার মধ্যে একটা জিনিস কিন্তু একই। একটা স্কুটার। আর কিছু যাক আর না যাক, স্কুটারটা থাকবেই। সবেধন নীলমণির মতো বংশ পরম্পরায় চলে আসছে এই দু’চাকার যানটি। শুধু সিনেমা নয়, বাস্তবেও একটা সময় অধিকাংশ মধ্যবর্তী পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল এই স্কুটার। যার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে আমাদের ছোটবেলার স্মৃতি, লড়াইয়ের চিহ্ন।
দু’চাকার বাইক না হয়ে স্কুটার কেন এত তাড়াতাড়ি সমাজের একটা বড় অংশের আপন হয়ে গেল? কারণটা বোধহয় এর সৃষ্টি থেকেই স্পষ্ট। তখন সদ্য বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে। ইউরোপের অর্থনীতির অবস্থা খুব একটা ভাল না। তখন কম খরচায় একটা এমন যান দরকার ছিল, যা হবে টেঁকসই, অর্থাৎ অনেক দিন চলবে। এবং অবশ্যই, সমস্ত ধরণের মানুষের যাতায়াতের সুবিধা হবে। এই পরিস্থিতিতে জায়গা করে নেয় স্কুটার। ভেস্পা কোম্পানির জন্য এনরিকো পিয়াজ্জিও তৈরি করেছিলেন এই দুই চাকার যান। ব্যাস, বাকিটা ইতিহাস! খুব তাড়াতাড়ি বাজার দখল করে নেয় এটি। তবে চলার পথটি যে খুব সুখকর ছিল, তাও নয়। স্কুটারের সাফল্য নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত ছিল ভেস্পাও। প্রায় একরকম চোখ বন্ধ করেই একটা চেষ্টা নেয় তারা। ১৯৪৬ সালে ২,৪৮৪টি স্কুটার বাজারে ছাড়ে ভেস্পা। সেই বছরেই এই সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়ায় ১০ হাজারের ওপরে। তারপর যত সময় এগোতে থাকে, স্কুটারও জড়িয়ে যায় সাধারণের জীবনের সঙ্গে। তবে ব্যবসা বা ইতিহাসের কচকচানি কি নস্টালজিয়াকে ছুঁতে পারবে? বাড়ির নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে কোথাও যাওয়ার ক্ষেত্রে একমাত্র ভরসা ছিল এই স্কুটার। স্কুল থেকে বা পড়া থেকে স্কুটারে চড়ে বাবার পেছনে বসে বাড়ি ফেরা, বা নিজের প্রিয়জনকে নিয়ে একান্তে বেরিয়ে পড়া—আমাদের মধ্যবিত্ত জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে স্কুটার। এমনকি আজও, চারিদিকে চোখ ফেরালে একটা নয় একটা পরিবার পাওয়াই যাবে, যাদের সঙ্গে বহু বছর ধরে রয়েছে একটি স্কুটার। উন্নয়নের ভিড়ে সংখ্যাটা হয়ত কমেছে, ভরসাটা কমেনি এখনও।