সাবেক কলকাতার গলিতে পা রাখলেই যেন ইতিহাসের শরিক হয়ে ওঠা যায়। তেমনই এক ইতিহাসের সাজসজ্জা চলছে পাথুরিয়াঘাটা ব্যায়াম সমিতিতে। গতবছর করোনা অতিমারীর কারণে মাতৃ আরাধনায় অংশ নিতে পারেননি বহু মানুষ। এবারে ভিড় বাড়বে অনেকটাই। আবার তার মধ্যেই রয়েছে সংক্রমণের আশঙ্কাও। সেইসব সামলানোর ব্যবস্থা করতেই ব্যস্ত ক্লাবের কর্তারা। আসলে এই পুজো তো নিছক কালীপুজো নয়, তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসও। খোদ বাঘাযতীনের হাত দিয়ে শুরু পাথুরিয়াঘাটা (Pathuriaghata) ব্যায়াম সমিতির কালীপুজো। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু স্বয়ং সভাপতিত্ব করেছেন এই পুজোর।
লোকমুখে এই কালী বড়োকালী নামেই পরিচিত। আকারে তা যে বেশ বড়ো, তাতে সন্দেহ নেই। ৩১ ফুট উঁচু মূর্তির হাতে ৬ ফুটের খড়গ। দক্ষিণা কালীর মতোই এই মূর্তির বামহাতের একটিতে খড়গ অন্যটিতে অসুরমুণ্ড। ডানহাতে বরাভয়। পুজোর শুরু হয় স্বদেশি যুগের প্রথম যুগে। তখন অনুশীলন সমিতির শাখা তৈরি হচ্ছিল নানা জায়গায়। এর মধ্যেই ১৯০৮ সালে অতুলকৃষ্ণ ঘোষ এবং যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৈরি হয় পাথুরিয়াঘাটা ব্যায়াম সমিতি। এই যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ই বাঘাযতীন। সম্ভবত ১৯০৮ সালেও সমিতিতে কালীপুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। তবে তার কোনো নথি নেই। এর পরেই শুরু হয়ে যায় আলিপুর বোমা মামলা। অনুশীলন সমিতি নিষিদ্ধ হয়। গোপনে বিপ্লবী কর্মকাণ্ড চলতেই থাকে। কিন্তু প্রকাশ্যে অনুশীলন সমিতির সমস্ত কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় পাথুরিয়াঘাটা ব্যায়াম সমিতির কাজও।
১৯১৫ সালে বুড়িবালামের যুদ্ধে প্রাণ হারালেন বাঘাযতীন। এরপর ১৯২৮ সালে জেল থেকে মুক্তি পান অতুলকৃষ্ণ। আবার শুরু হয় কালীপুজো। এই ১৯২৮ সালকেই পুজোর শুরু ধরা হয়। ২ বছর পর ১৯৩০ সালে পুজোর সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র। দেখতে দেখতে ৯৪ বছরে পা দিল ঐতিহাসিক এই পুজো। তবে এখনও তার জাঁকজমক রয়েছে একইরকম। দেবীর হাতের ৬ ফুটের খড়গটি সম্পূর্ণ রুপোর তৈরি। সমস্ত অলঙ্কার সোনার অথবা রুপোর তৈরি। বারোয়ারি পুজো হলেও তার আচার-রীতি অনেকটাই বনেদি বাড়ির পুজোর মতোই। আজও কালীপুজোর সময়ে দর্শনার্থীর ভিড় ভেঙে পড়ে। শহরে দুর্গাপুজোর ইতিহাস তো ছড়িয়ে আছেই। কালীপুজোর এমন ইতিহাসও সত্যিই রোমাঞ্চকর।
আরও পড়ুন
পুজোর পার্টি, ভাতি অথবা চারদিনের প্রেম
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
পুজোর রেশ কাটতেই 'অন্তর্ধান' ঘোষণা - কবে ঘুচবে রহস্য?