চাকরির জন্য দরখাস্ত করবেন, বা কোনো অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র পাঠাবেন। বা অফিসের দরকারি ফাইল পাঠাবেন। একসময় এই যাবতীয় কাজ করা হত খাতায় কলমে। মানে, চিঠির মাধ্যমে। কিন্তু এটা তো আধুনিক যুগ। এখন সব চটজলদি কাজ করার সময়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই যেন আমার জিনিসটা গন্তব্যে পৌঁছে যায়। সেখানে ইন্টারনেটের থেকে ভালো রাস্তা আর কী হতে পারে! ইন্টারনেটের চিঠি— এই শব্দজোড়া শুনলে মাথায় আসবে একটাই নাম, ইমেল। আর ইমেল শুনলে হাজার একটা নামের ভিড়ে উঁকি মারবে আরও একটি নাম। গুগল মেল, বা সংক্ষেপে জিমেল। ১৬ বছর আগে আজকের দিনেই যাঁদের পথ চলা শুরু হয়েছিল।
আরও পড়ুন
১৫ বছর পেরোল ইউটিউব, প্রথম ভিডিওটি আপলোড করেছিলেন এক ‘বাঙালি’!
কলেজে থাকতে থাকতেই পল বুশেট নামের একটি ছেলে তৈরি করে ফেলেছিলেন একটি পার্সোনাল ইমেল সফটওয়্যার। কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়েই ওঠাবসা এই মেধাবী ছেলের। সেটা ছিল নব্বইয়ের দশক। পরে যখন গুগলে একজন ডেভেলপার হিসেবে যোগ দেন, তখন এই ইমেল নিয়ে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করলেন। গুগলের লক্ষ্য একটাই— কি করে অনলাইন ইমেলের মাধ্যমে কাজ করা যায়; এবং সেটাকে জনপ্রিয় করা যায়। ১৯৯৯ সালে এই কাজ শুরু হয়। তার বছর তিনেক আগেই বাজারে এসেছে হটমেল। এরপর এসে যাবে ইয়াহু মেলও।
আরও পড়ুন
খড়গপুর আইআইটি, গুগল থেকে অ্যালফাবেট— সুন্দরে জীবন এক মধ্যবিত্ত লড়াইয়ের গল্প
এই পরিস্থিতিতে বুশেট ও তাঁর টিমের লক্ষ্য ছিল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আরও উন্নত, আকর্ষণীয় হয়ে বাজারে আসা। কিন্তু এই ইমেল পরিষেবা কি আদৌ কোনো কাজ দেবে? লাভবান হবে কি? হ্যাঁ, সংশয় ছিল গুগলের বেশ কিছু কর্মকর্তার মধ্যেই। কিন্তু কাজ জারি ছিল। সমস্ত বাধা কাটিয়ে দিনটি সামনে এল অবশেষে। ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল যাত্রা শুরু হয় গুগল মেলের। সংক্ষেপে, জিমেল। গুগল নাকি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ইমেল পরিষেবা দিচ্ছে গ্রাহককে! এই ব্যাপারটাই মজাদার লেগেছিল সবার। আরও এপ্রিল ফুলের দিন; মজা হতেই পারে। কিন্তু যখন বোঝা গেল এটা মজা না, সত্যি; গ্রাহকদের মধ্যে চাঞ্চল্য তৈরি হল।
আরও পড়ুন
কার্টুনের লড়াই নেমে আসত ময়দানেও, বে-ব্লেড ও আমাদের হারিয়ে যাওয়া ছেলেবেলা
তার কারণও আছে। সেই সময়ের ইমেল সার্ভিসগুলো ছিল স্লো, এবং অত আকর্ষণীয়ও ছিল না। সেখানেই বাজিমাত জিমেলের। প্রথমেই গ্রাহকদের জন্য বিনামূল্যে ১ জিবি ক্লাউড স্পেস দেয়। সেইসঙ্গে তার ঝাঁ-চকচকে চেহারা। ২০০৫ সাল থেকে মোবাইলেও চলে এল জিমেল। শুধু তাই নয়, প্রতিনিয়ত আরও কী করে ভালো করা যায়, সেই চেষ্টা চলতে থাকে। পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে গ্রাহকদের সংখ্যা। অনেক পরে শুরু করেও, বাজারে সবার আগে চলে এল গুগল মেল। আর আজ? ১৫০ কোটিরও বেশি মানুষ পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হতে খুঁজে নিয়েছেন জিমেলকে। ভারতেও সমানভাবে জনপ্রিয় এটি। হঠাৎ ভারতের কথা চলে এল কেন, ভাবছেন তো? কারণ শুরুর দিকে জিমেল তৈরির সময় যুক্ত ছিলেন এক ভারতীয়ও। সঞ্জীব সিং। গুগলে পল বুশেটের পরপরই ঢুকেছিলেন তিনি। দুজনে মিলে শুরু থেকে যুক্ত ছিলেন জিমেলের সঙ্গে। ভারত এভাবেই শুরু থেকে যুক্ত ছিল এর সঙ্গে।
আরও পড়ুন
তিন বছর আগেই মৃত মেয়ে, প্রযুক্তির সাহায্যে তাকে ‘ফিরে’ পেলেন মা
চিঠির যুগ পেরিয়ে আমরা আজ দাঁড়িয়ে ইমেলের যুগে। অনলাইন চিঠিই বলা যায়। অনেকে হয়তো খানিক বিরোধিতাও করবেন। এই ইন্টারনেট, ইমেলের জন্য চিঠির নস্টালজিয়া হারিয়ে গেল। চিঠি লেখার আলাদা একটা মোহ আছে, সেটা কখনই অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তিকেও তো আপন করে নিতে হবে! আর আজকের পরিস্থিতিতে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতে হয়। কোনো গুরুত্বপূর্ণ নথি, ফাইল, এগুলো কয়েক মিনিটের মধ্যে পৌঁছনো দরকার। সেক্ষেত্রে চিঠি কী করে কাজ করবে? ইমেল সেখানে অনেকভাবে কাজে দেয়। তার সঙ্গেই জুড়ে আছে জিমেল। আজকের হটমেল বা আউটলুক, ইয়াহুকে পেরিয়ে কয়েক কোটি মানুষের আপন হয়ে আছে। ওইদিন কর্মকর্তাদের কথা শুনে যদি সরে আসতেন পল বুশেট, সঞ্জীব সিংরা, তাহলে কি এমন কাজগুলো হত?
Powered by Froala Editor