প্রথম ই-মেইল পৌঁছতে ১ ঘণ্টা, দুটি অক্ষরেই বন্ধ কম্পিউটার!

মাত্র কয়েক মিটার দূরে রাখা দুটি কম্পিউটার। একটি কম্পিউটার থেকে অন্যটিতে একটি মেসেজ পাঠানো হয়েছে। মানে যাকে ই-মেইল বলে, তাই। কিন্তু এই কয়েক মিটারের দূরত্ব পেরোতে লেগে গেল প্রায় এক ঘণ্টা সময়। হ্যাঁ, এক ঘণ্টা। ভাবছেন নিশ্চই, ইন্টারনেটের গতি নেহাতই কম! তাহলে এরপর যা হল সেটার কথা বলা যাক। মেসেজ পৌঁছাল। কিন্তু পুরোটা না। কিছুটা যাওয়ার পরেই সিস্টেম বন্ধ হয়ে গেল। বড়ো ধরনের কোনো মেসেজ কিন্তু নয়। লেখা ছিল মাত্র একটি শব্দ। লগইন। এই একটি শব্দও পুরোপুরি পাঠাতে পারল না কম্পিউটারটি। পৌঁছাল কেবল দুটি বর্ণ। এল এবং ও।

আজকের দিনে এমন পরিস্থিতির কথা কল্পনা করাও কঠিন। এখন প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ তথ্য কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। আর এই পুরো বিষয়টাকে ধরে রেখেছে ইন্টারনেট। সেখানে ছোটোখাটো কিছু গোলযোগ মাঝে মাঝে দেখা দেয় বটে। কিন্তু এমন গুরুতর সমস্যার কথা ভাবা যায় না। আমরা যে সময়ের কথা বলছিলাম, তখন ইন্টারনেট বলে কোনো বস্তুর অস্তিত্বই ছিল না। সাল ১৯৬৯। ক্যালেন্ডারের পাতায় দিনটা ২৯ অক্টোবর।

ইন্টারনেটের ব্যবস্থা না থাকলেও বিভিন্ন জায়গার কম্পিউটারে জমা তথ্য এক জায়গায় ধরে রাখার মতো একটি ব্যবস্থা তখনই তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আর সেই ব্যবস্থার নাম ছিল আরপানেট। আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিভাগের সঙ্গে জড়িত ৪টি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই ব্যবস্থা ছিল। একটি ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া লস অ্যাঞ্জেলস ক্যাম্পাস। আর বাকিগুলি ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা বারবারা ক্যাম্পাস, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং উটাহ ইউনিভার্সিটি। এর মধ্যে লস অ্যাঞ্জেলস ক্যাম্পাসেই কম্পিউটার সংক্রান্ত সবচেয়ে বেশি গবেষণার কাজ চলত। সেখানেই লিওনার্দো ক্লেইনরক এবং চার্লি ক্লাইন নামের দুই গবেষক চেষ্টা করেছিলেন একটি কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে তথ্য পাঠানোর। আংশিক সফল হয়েছিল সেই প্রচেষ্টা।

হ্যাঁ, আংশিক সাফল্য স্বীকার করতেই হবে। অন্তত দুটি বর্ণও তো পাঠানো সম্ভব হয়েছিল। তার মানে পদ্ধতিগতভাবে কোনো ত্রুটি যে নেই, সেটা বোঝা গিয়েছিল। কিন্তু সেই পদ্ধতি প্রয়োগ করার মতো সিস্টেম তখনও তৈরি হয়নি। ই-মেইলের যাত্রাপথ শুরু হয়েছিল এই আংশিক সাফল্যের ভিতর দিয়েই। অবশ্য পুরোপুরি সাফল্য পেতেও বেশিদিন লাগেনি। মাত্র ২ বছরের মাথায় তা সম্ভব করে দেখালেন ম্যাসাচুসেট ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির গবেষক রে টমলিনসন। তাঁকেই সেই অর্থে ই-মেইলের জনক বলতে হয়।

আরও পড়ুন
প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেতা হিসেবে অস্কারজয়; সিডনি পোয়েটার ও দিনবদলের কাহিনি

টমলিনসন আরপানেটের সঙ্গে জুড়ে নিলেন আরও দুটি প্রোগ্রাম। একটি প্রোগ্রামের নাম দিলেন সেন্ট মেসেজ, আর অন্যটির নাম রিড মেইল। বলা বাহুল্য, যে কম্পিউটার থেকে মেইল পাঠানো হবে সেখানে কাজ করবে সেন্ট মেসেজ প্রোগ্রাম। আর যে কম্পিউটারে সেই মেইল পড়া হবে, সেখানে কাজ করবে রিড মেইল প্রোগ্রাম। আজও মেইল বিনিময়ের ক্ষেত্রে এই দুই প্রোগ্রামই ব্যবহার করা হয়। অবশ্য আজকের দিনে সেই প্রোগ্রাম অনেক উন্নত। এছাড়াও একটি কম্যান্ড ব্যবহার করেছিলেন টমলিনসন। সেটি আর কিছুই নয়, আমাদের অতি পরিচিত চিহ্ন ‘@’।

আরও পড়ুন
ভারতের প্রথম রক মিউজিয়াম হায়দ্রাবাদে

প্রথম প্রচেষ্টাতেই সাফল্য পেয়েছিলেন টমলিনসন। অবশ্য সেই মেসেজে কী লেখা ছিল, তা আর জানা যায়নি। পরে সাংবাদিকদের টমলিনসন জানিয়েছিলেন, মেসেজটিতে কোয়ার্টি কী-বোর্ডের প্রথম সারির কয়েকটি অক্ষর এলোমেলোভাবে লেখা ছিল। সেই বিন্যাস তাঁরও মনে নেই। তবে ইতিহাস মনে রেখেছে ক্লেইনরক এবং ক্লাইনের ব্যর্থ মেইলটির কথা। ব্যর্থ হলেও, সেখান থেকেই তো এই ঐতিহাসিক যাত্রার শুরু। আজও যে ব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে কম্পিউটার যোগাযোগের কথা ভাবাই যায় না।

আরও পড়ুন
ওড়িশার প্রথম বাল্যবিবাহমুক্ত জেলা গঞ্জাম

Powered by Froala Editor

Latest News See More